মাধবপুর প্রতিনিধি◾
হবিগঞ্জের মাধবপুরে করোনাভাইরাসের কারণে হত দরিদ্রদের জন্য আসা সরকারি ত্রাণে নিজের পছন্দের ১০০ জনের নাম না দেয়ায় জনপ্রতিনিধির উপর উত্তেজিত হয়ে উঠেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. মিজানুর রহমান। এ সময় উপস্থিত লোকজন তাকে উত্তম-মধ্যম দিলে কোন রকমে সেখান থেকে দৌড়ে রক্ষা পান তিনি। তবে বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মিথ্যে অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় লোকজন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়- প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্ব অসহায় হয়ে পড়ছে। তবে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন কেটে খাওয়া নি¤œ আয়ের মানুষরা। সরকার তাদের জন্য ত্রাণ বরাদ্দ দিয়েছে। গত ৩ এপ্রিল উপজেলার আন্দিউড়া ইউনিয়ন কমপ্লেক্সে অসহায়দের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করছিরেন ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ খান হেলাল। এ সময় ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান ইউপি চেয়ারম্যানের হাতে ১০০ জনের নামের একটি তালিকা ধরিয়ে দেন। কিন্তু এতে ইউপি চেয়াম্যান রাজি না হওয়ায় মিজানুর রহমান তার উপর উত্তেজিত হন। উপস্থিত ত্রাণগ্রহিতারা বিষয়টি দেখে মিজানুর রহমানকে মত্তম-মধ্যম দেয়া শুরু করেন। এক পর্যায়ে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করলে তিনি দৌড়ে পালিয়ে যান।
পরে বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ওইদিন বিকেলেই তিনি ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মাধবপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তিনি নিজেকে সংবাদকর্মী দাবি করে কি পরিমাণ ত্রাণ এসেছেন তা জানতে চেয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় লোকজন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ তোফায়েল শেখ বলেন- ‘ত্রাণ বিতরণের সময় মিজানুর রহমান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ১০০ জনের একটি নামের তালিকা দিয়ে তাদের ত্রাণ দিতে বলেন। অথচ তিনি যে নামগুলো দিয়েছিলেন ওই সময় সেখানে তাদের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু তালিকায় থাকা লোকজনকে না দেখে চেয়ারম্যান মহোদয় ত্রাণ দেবেন না বললে মিজানুর রহমান উত্তেজিত হয়ে অকত্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। তখন ত্রাণ নিতে আসা লোকজন মিজানের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।’
এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা রহিম চৌধুরী বলেন- আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছেন। কিন্তুতিনি বর্তমান চেয়ারম্যানের কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হয়েছেন। যার কারণে তিনি সব সময় চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদের বিরুদ্ধে লেগে আছেন।
এ ব্যাপারে আন্দিউড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ খান হেলাল বলেন- ‘আওয়ামী লীগ নেতা দাবি করে বিভিন্ন সময় অসহায়দের জন্য আসা ত্রাণে তিনি ভাগ বসানোর চেষ্টা করেন। এখন করোনাভাইরাসের মতো একটি মহামরিতেও তিনি আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে জনগণের পাশে থাকার বদলে তাদের খাবারে ভাগ বসাতে চান। কিন্তু আমি তার এই অন্যায় আবদার মেনে না নেয়ায় আমার উর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং আমার বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করেছেন।’
তিনি বলেন- ‘মিজানুর রহমান সেদিন ১০০ জনের একটি তালিকা আমার হাতে দিয়েছেন। কিন্তু তারা কে আমি চিনি না এমনকি ওইদিন তার তালিকার কেউ ত্রাণ নিতে আসেননি।’
এ ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমানকে বারবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে বিষয়টি নিয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছে। এতে তিনি উল্লেখ করেছেন- আন্দিউড়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ার আব্দুল আহাদ-এর কাছে তিনি ৯০ জনের একটি তালিকা দিয়েছে। কিন্তু চেয়ারম্যান তার সেই নামের তালিকাটি ছিড়ে ফেলে এবং গালিগালাক করে।
উল্লেখ্য- এরআগেও আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান মিজানের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। সরকারি ত্রাণ বিতরণে মোটা বরাদ্দ চাওয়া, মৃতদেহের পকেট থেকে মোবাইল চুরি ও নারীদের শ্লীলতাহীর বিষয়ে বিভিন্ন স্থানীয় পত্রিকায় ফলাও করে সংবাদ পরিবেশ করেছে। এছাড়া প্রভাব কাটিয়ে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের টাকা আত্মসাতরে জন্য তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুখলেছুর রহমানতাকে আটক করেন।
Leave a Reply