২০১৫ সালের এপ্রিল মাসের শেষের দিকে আমি যখন সৃজন জুনিয়র হাই স্কুল এ যোগদান করি, তখন বৃষ্টি ৫ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।
ছাত্রী হিসেবে ভালোই ছিল। ক্লাসে নিয়মিত আসার পাশাপাশি দৈনন্দিন পড়াগুলোও সম্পূর্ণ করত মেধাবী ছাত্রী বৃষ্টি।
তখন থেকেই ধারণা ছিল বৃষ্টি ঈর্ষাম্বিত কিছু করবে।
২০১৫ সালের অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় সুহেল দাঁস দাদার মাধ্যমে বৃষ্টির গৃহশিক্ষক হিসেবে যোগ দেই।
নভেম্বরে যখন তার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শুরু হয় তখন সে অসুস্থ হয়ে পরে। এতটাই অসুস্থ হয়,যে ইংরেজি পরীক্ষা না দেওয়ার উপক্রম হয়।
তারপর সে পরীক্ষা দেয় এবং ইংরেজিতে এ+ মিস করে জিপিএ ৪.৮৩ পেয়ে সমাপনী পরীক্ষা শেষ করে।
তারপর ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় বাহুবলের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীননাথ ইনস্টিটিউশন সাতকাপন সরকারি হাই স্কুলে। জিপিএ -৫ প্রত্যাশী হয়েও না পেয়ে কিছুটা হতাশ ছিল বৃষ্টি।
তাই তার তখন যতটা মানসিক সাপোর্ট দরকার ছিল ততটাই দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম আমি একজন শিক্ষক হিসেবে।
বিভিন্নভাবে উৎসাহ উদ্দীপনার মাধ্যমে তারে বাসায় নিয়িমিত সকল বিষয়ে সাজেশন দিতে থাকি।
তারপর সেও মানসিকভাবে নিজেকে শক্ত করতে থাকে এবং পরবর্তী পরীক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে।
তারপর সে ৬ষ্ঠ শ্রেণির অর্ধ বার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষায় ১ম স্থান অর্জন করে ৭ম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়।
একই ধারাবাহিকতায় সে ৭ম থেকে ৮ম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়। তারপর ২০১৮ সালের জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে গোল্ডেন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত হয়। যে জিপিএ-৫ এর জন্য তার মনটা কিছু খারাপ ছিল সেই ৬ষ্ঠ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা থেকে পরবর্তী সব পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করে সাফল্যেরসহিত।
যদিও তারে বুঝাতে চেষ্টা করেছি যে এই জিপিএ -৫ পাওয়া শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য নয়। তারপরও তার ভিতরে একটা প্রতিজ্ঞা ছিল সঠিকভাবে জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি জিপিএ -৫ ও পাবে।
তার আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল জেএসসি পরীক্ষায় বাহুবল উপজেলায় ১ম স্থান অর্জন করা।
আমি সেটার জন্য তারে যথেষ্ট উৎসাহ ও পরামর্শ দিয়েছি।
সে তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ট পরিশ্রম করেছে। আর পেছন থেকে যতটুকু উৎসাহ -অনুপ্রেরণা দেওয়া দরকার ঠিক ততটুকু দেওয়ার চেষ্টা করেছি আমি গৃহশিক্ষক হিসেবে সব সময়।
জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট বৃত্তি পরীক্ষা -২০১৮ এর ফলাফল প্রকাশিত হয়। এতে সে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায় এবং বাহুবল উপজেলায় ১ম স্থান অর্জন করে।
বৃষ্টি ভবিষ্যতে ভালো মানুষ হওয়ার পাশাপাশি একজন ভাল ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় বলে এসব আশা প্রত্যাশা ব্যক্ত করে।
দোয়া করবেন সবাই আমার প্রিয় ছাত্রীটিকে নিয়ে আমি যেন এভাবেই সফলতার গল্পগুলো লিখতে পারি।
বলছিলাম আমার অত্যন্ত প্রিয় একজন ছাত্রী জান্নাত মেহজাবিন বৃষ্টির কথা।
সে বাহুবল বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জনাব তাজুল ইসলাম ও গৃহিনী রওশন আরা লাকীর বড় মেয়ে।
সে তার ফলাফলের জন্য স্কুলের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা, বাহুবলে অবস্থিত ‘নেক্সাস কোচিং’ সেন্টারের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।
বৃষ্টি তার ভাবনীয় লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছে।
লেখকঃ মোঃ মামুনুর রশীদ
অধ্যক্ষ হামিদীয়া হলি চাইল্ড একাডেমী,হামিদনগর,বাহুবল,হবিগঞ্জ।
সম্পাদনায়ঃশাহ মোহাম্মদ দুলাল আহমেদ।
Leave a Reply