শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৪ পূর্বাহ্ন

হবিগঞ্জে বিনা পয়সায় ৯৭জনের চাকুরী দিলেন এসপি মোহাম্মদ উল্ল্যা

নুর উদ্দিন সুমন, বার্তা সম্পাদক
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৮ জুলাই, ২০১৯
  • ৫৮৯ বার পঠিত

নুর উদ্দিন সুমন ॥ মাত্র ১শ টাকার ব্যাংক ড্রাফট জমা দেয়ার বিনিময়ে সরকারী শিশু পরিবারের এতিম দুজন, চা-শ্রমিক, ক্ষুদ্র নৃগোষ্টি, ভিক্ষুক, রাজমিস্ত্রী, টিউবওয়েল মিস্ত্রী, আইসক্রীম, সবজি, কলা বিক্রেতা, বর্গা চাষী, মুক্তিযোদ্ধা, গৃহপরিচারিকা (কাজের বুয়া)’র সন্তানরা পেল পুলিশের চাকুরী। অন্যের জামা-কাপড় ধার-কর্জ করে গায়ে দিয়ে ভাইবা বোর্ডে উপস্থিত হওয়া কাজের বুয়ার দুই মেয়ে একদিকে যেমন হতদরিদ্র-অন্যদিকে তারা লেখা পড়ায় অত্যান্ত মেধাবী ও বুদ্ধিমান। সম্প্রতি হবিগঞ্জে অনুষ্টিত হয়েছে পুলিশ কন্সস্টেবল পদে নিয়োগ পরিক্ষা। আর এ পরিক্ষায় মাধ্যমে নিয়োগের ব্যাপারে সততা ও স্বচ্ছতার উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা (বিপিএম-পিপিএম)। তিনি তার অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে নিয়ে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া অত্যান্ত স্বচ্ছতার সাথে সম্পন্ন করেছেন। যেখানে ছিল না কোন ধরনের অন্যায় তদবির, হয়নি কোন টাকার (ঘুষ) লেনদেন। সম্পুর্ন বিনা পয়সায় চাকুরী লাভ করেছেন ৯৭ জন কন্সস্টেবল। ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ পরিক্ষায় চুড়ান্ত উত্তীর্ণদের ফুল দিয়ে বরণ করেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যাহ (বিপিএম-পিপিএম)।

অন্ধ বাবার সাথে কনস্টবল নিয়োগপ্রাপ্ত যুবকে ফুল দিয়ে বরণ করছেন পুলিশ সুপার

হবিগঞ্জ পুলিশ লাইনে রবিবার বিকেলে প্রেস ব্রিফিং করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যাহ (বিপিএম-পিপিএম)। এ সময় তিনি বলেন, কারো বাবা কৃষক, কারো বাবা শ্রমিক, কারো বাবা আইসক্রীম বিক্রেতা, কলা বিক্রেতা, কারো বাবা রাজমিস্ত্রী, টিউবওয়লে মিস্ত্রী, সরকারী শিশু পরিবারের এতিম শিশু, চা-শ্রমিকের সন্তান, কারো বিধবা মা গৃহপরিচারিকার কাজ করে সন্তানকে মানুষ করেছেন। কেউ নিজেই টিউশনি করে বা শ্রমিকের কাজ করে বা ভ্যান চালিয়ে অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে লেখাপড়া করেছেন। কারো কারো অভিভাবক হয়তোবা ছোট চাকুরী বা ব্যবসা করে সন্তানকে বড় করেছেন। এরা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকলেও মেধার দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে ছিল। এদের চোখে আছে দেশ সেবার স্বপ্ন। এরা অদম্য। শত বাঁধার মুখেও এরা এগিয়ে যেতে চায়। এরা প্রধানমন্ত্রীর ব্রত সুশাসন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার কারিগর হতে চায়। এরা হলো ২০১৯ সালে হবিগঞ্জ জেলা থেকে প্রাথমিক ভাবে মনোনীত ৯৭ জন ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল। গত ১ জুলাই থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত নিয়োগ প্রক্রিয়ার পথ পরিক্রমা পাড়ি দিয়ে এরা মনোনীত হয়েছে। পুলিশ সুপার বলেন, পুলিশ সদর দপ্তর থেকে আগত ২ জন পর্যবেক্ষক, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা থেকে আগত ২ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং হবিগঞ্জ জেলা পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত নিয়োগ বোর্ডের শ্রম, ধৈয্য ও মেধার ফসল মনোনীত প্রার্থীরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি’র প্রেরণা আমাদেরকে সাহস জুগিয়েছে। আমি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনি বলেন, প্রার্থীরা যেভাবে মেধা, যোগ্যতা, ন্যায় ও নিরপেক্ষতার মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছে, ভবিষ্যতে বিভিন্ন কর্মস্থলে দেশের সাধারণ নাগরিকদের তারা যেন ন্যায় ও নিরপেক্ষতার মাধ্যমে সেবা প্রদান করেন। যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে এর মধ্যে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম বাগ গ্রামের মৃত দুর্গা চরন দেব ও গৃহপরিচারিকা বাসন্তি রাণী দেবের দুই কন্যা রুনা রানী দেব ও রিমা রানী দেব। তারা অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের লোক।

 

গৃহপরিচারিকা বাসন্তি রাণী দেবের দুই কন্যা নিয়োগ পাওয়ার পর তাদের মায়ের সাথে

এ ছাড়া চুনারুঘাট উপজেলার আব্দুর রহিমপুর গ্রামের অন্ধ কদ্দুছ আলীর পুত্র সুমন আহমেদসহ ২ জন এতিম যুবককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ২০জন মুক্তিযোদ্ধা পুরুষ, ২৯ জন সাধারণ পুরুষ, অন্যান্য কোটায় ৯ জন। নারী কন্সস্টেবল ৩৪ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৪ জন, অন্যান্য কোটায় ১ জনসহ মোট ৯৭ জনকে নিয়াগ দেয়া হয়। এ সময় সদ্য নিয়োগ প্রাপ্তরাসহ তাদের অভিভাবকরা প্রধানমন্ত্রীসহ পুলিশ সুপার এর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রবিউল ইসলাম। এতে বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ লুৎফুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম রাজু আহমেদ প্রমূখ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন থানার অফিসার ইনচার্জ, সাংবাদিক ও নিয়োগপ্রাপ্ত কন্সস্টেবলদের অভিভাবকগন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2019 Prothomsheba
Theme Developed BY ThemesBazar.Com