হবিগঞ্জ সংবাদদাতাঃ হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল ইউনিয়নের নাজিরপুর গ্রামের সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী সাজেরা খাতুন হত্যা মামলার আটক অন্যতম আসামী ঘাতক আব্দুর রউফ (২৫) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এ ব্যাপারে গতকাল মঙ্গলবার রাত ৮টায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রবিউল ইসলাম প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ঘটনার প্রায় ৯ মাস পর হত্যাকান্ডের মুটিভ উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। গত সোমবার রাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ সহিদুর রহমান, তদন্ত ওসি জিয়াউর রহমান ও উক্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পলাশ চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে পইল গ্রাম থেকে আব্দুর রউফকে আটক করে। সে নাজিরপুর গ্রামের আব্দুন নূরের পুত্র। রাতভর জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত এবং কারা কারা আরও জড়িত আছে তা প্রকাশ করে। তবে তদন্তের স্বার্থে পুলিশ তা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করেননি।
কি কারণে ওই গ্রামের সৌদি প্রবাসী সঞ্জব আলীর স্ত্রী সাজেরা খাতুন (৫০) কে হত্যা করা হয়েছে এ ব্যাপারে পুলিশকে আব্দুর রউফ জানায়, সে সহ আরও ৪/৫ জন যুবক ওই প্রবাসীর বাড়িতে চুরি করতে যায়। এ সময় প্রবাসীর পুত্রবধু বাড়িতে ছিল না। এক পর্যায়ে টাকা পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার চুরি করার সময় সাজেরা তাদের চিনে ফেলায় হাত-পা বেধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে চলে যায়। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে আটক আব্দুর রউফকে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে প্রেরণ করলে ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে সে হত্যা কথা স্বীকার করে উল্লেখিত বিষয়ে জবানবন্দি দেয়। আদালত তাকে জবানবন্দি শেষে কারাগারে প্রেরণ করে। এ ছাড়া পর্যালোচনাক্রমে বিভিন্ন সোর্সেও মাধ্যমে পুলিশ সন্দেহভাজন আরও ৩ জনকে উক্ত মামলায় আটক করে কারাগারে প্রেরণ করে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও বলেন, আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে পুলিশ হত্যা মামলার মুটিভ উদ্ধার করেছে। শীঘ্রই আদালতে চার্জশীট দাখিল করা হবে। এছাড়া এই মামলার আরও অন্যান্য আসামীদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
প্রসঙ্গ, ২০১৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর নিহত সাজেরা খাতুন নগ্ন অবস্থায় হাত-পা ও মুখ কাপড় দিয়ে বাধা ছিল। অনেকে মনে করছেন জুয়ার টাকার জন্য দুর্বৃত্তরা ওই বাড়িতে চুরি করতে গিয়ে গৃহবধুকে হত্যা করেছে। তবে এ হত্যাকান্ড রহস্যজনক বলে মনে করা হচ্ছে। খবর পেয়ে ঘটনার পরদিন দুপুরে সদর থানার ওসি অপারেশন সাইফুল ইসলাম, এসআই সাহিদ মিয়া ও পলাশ দাসের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন। এলাকাবাসী জানান, নাজিরপুর গ্রামের সৌদি প্রবাসী সিরাজ মিয়া ওরফে সঞ্জব আলী দীর্ঘদিন ধরে তার পুত্র সৈয়দ আলীকে নিয়ে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরব বসবাস করছেন। বাড়িতে সিরাজ মিয়ার স্ত্রী সাজেরা খাতুন ও তার পুত্রবধু পপি আক্তার বসবাস করছেন। গত রবিবার পবিত্র আশুরা উদযাপনের জন্য পপি আক্তার সুলতানশী গ্রামে তার পিতার বাড়িতে চলে যায়। বাড়িতে শুধু মাত্র তার শ্বশুরি সাজেরা খাতুন অবস্থান করেন। এ সুযোগে সাজেরা খাতুন ঘুম থেকে না উঠায় পাড়া-প্রতিবেশী ডাকাডাকি করেন। কিন্তু ঘুম থেকে না উঠায় তাদের সন্দেহ হয়। প্রতিবেশী একজন ঘরের জানালার ফাক দিয়ে দেখতে পান হাত-পা ও মুখ বাধা অবস্থায় ঘরের মেজেতে সাজেরার দেহ পড়ে আছে। এ দৃশ্য দেখে চিৎকার শুরু করলে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে দেখতে পায় রান্না ঘরের দরজা খোলা। তখন পুলিশসহ স্থানীয় লোকজন ঘরে প্রবেশ করে দেখতে পায় ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র এলোমেলো ও সাজেরা নগ্ন অবস্থায় পড়ে আছে। তার হাত-পা ও মুখ কাপড় দিয়ে বাধা। পরে লাশটি পুলিশ মর্গে প্রেরণ করে। এ খবর পেয়ে সৌদি থেকে সাজেরার স্বামী সঞ্জব আলী দেশে এসে ২০১৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বাদী হয়ে সদর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
Leave a Reply