পৃথিবীতে যখন কোন নতুন মানুষের আগমন ঘটে তখন আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। নানা রকম প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয় তাকে বরণ করার জন্য। আর সেই মানুষটাই যখন পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় তখন এক হৃদয় বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
পৃথিবীর সব কিছুই নশ্বর। কালের আবর্তনে সবকিছুই হয়তো একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে।
তবে পৃথিবী ধ্বংসের আগে কিছু মানুষের কিছু কর্ম বেঁচে থাকবে ঐ মানুষের অবর্তমানেও।
কারণ মানুষ বাঁচে তার কর্মের মাঝে,বয়সের মাঝে নয়।
তেমনিভাবে বাহুবল উপজেলার আপামর জনসাধারণের প্রিয় ব্যক্তিত্ব,উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব ‘জসিম উদ্দিন’ স্যার যখন বাহুবল প্রথম যোগদান করেন ২০১৭ সালে, তখন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ স্যারকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
কিন্তু আজ যখন স্যারের বাহুবলকে বিদায় জানানোর সময় এসে গেছে তখন বুঝা যাচ্ছে বাহুবলের মানুষ উনাকে কতটা ভালোবাসে আর উনি কতটা ভালোবেসেছিলেন আমাদের উপজেলাবাসীকে।
এখন প্রতিদিন বাহুবলের নানা শ্রেনীপেশার মানুষ স্যারকে বিদায়ী সংবর্ধনা দিচ্ছে ক্রেস্ট দিয়ে আর অকৃত্রিম ভালোবাসাটা দিচ্ছে মন উজাড় করে।
একটু পরে হলেও হয়তো অনেকেই বুঝতে পারছেন বাহুবলবাসী আজ একজন ভালো মানুষ নয় শুধু ভালো একজন সেবাপ্রেমী অভিভাবক হারাচ্ছে।
তাইতো স্যারের বিদায় বেলায় আর ফুল নয় মানুষ উপহার দিচ্ছে স্যারকে চোখের জল।
আজ নিজ চোখে দেখলাম ‘আমরা সবুজ’ সংঘের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অনেক বক্তাই অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে চোখের জল ফেলেছেন। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি নিজেও যখন বক্তব্য দিচ্ছিলাম তখন নিজের আবেঘটা ধরে রাখতে অনেক কষ্ট হয়েছিল।
এভাবেই কেউ প্রকাশ্যে আর কেউ লুকিয়ে চোখের জল ফেলছে স্যারের বিদায়ী সংবর্ধনায়।
আর স্যার যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখনকার পরিবেশটা কেমন ছিল যারা উপস্থিত ছিলেন তারাই বুঝবেন।
বক্তব্যের মাঝে যখন বাহুবলবাসীর প্রতি ভালবাসার বর্ণনা দিচ্ছিলেন তখন স্যারের দুচোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছিল।অনেকেই স্যারের অশ্রুসিক্ত মুখের ছবিটা নিজেদের ফোনে ধারণ করে রাখার চেষ্টা করেছেন।
আর আমার মত অনেকের হৃদয়েই হয়ত এই অশ্রুবিন্দুগুলো গেঁথে রয়েছে।
স্যার যেমন বিদায়বেলায় বাহুবলবাসীর জন্য নিজের চোখের জল ফেলে আরোও বেশি ঋণী করে গেছেন আমাদেরকে।বাহুবলবাসীও স্যারের জন্য চোখের জল ফেলে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, তিনি আমাদের হৃদয়ের মনিকোঠায় ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন।
বাহুবলবাসী আপনার কৃতকর্মের মাঝেই আপনাকে খুঁজে পাবে।
আপনি আমাদের মাঝে বেঁচে থাকেবেন বাহুবল পাবলিক লাইব্রেরির রূপকার হয়ে, আমরা সবুজের স্বপ্নদ্রষ্টা হয়ে, পুওর কেয়ার কুইক রেসপন্স টিমের স্বপ্নসারথি হয়ে, নজরুল একাডেমির আড্ডার মধ্যমণি হয়ে, ডিবেটিং ক্লাবের অগ্রযাত্রার পথিক হিসেবে আর সাধারণ মানুষের মনের অকৃত্রিম ভালোবাসা হয়ে।
পরিশেষে একটা কথাই বলব আপনি যেখানেই থাকবেন,যেভাবেই থাকবেন, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
লেখকঃমামুনুর রশীদ
অধ্যক্ষ,হামিদিয়া হলি চাইল্ড একাডেমি,হামিদনগর,বাহুবল,হবিগঞ্জ।
Leave a Reply