হবিগঞ্জ সংবাদদাতঃ হবিগঞ্জ পৌর এলাকার আনোয়াপুরের টমটম চালক সাবাজ মিয়া (২৫) হত্যা দায় স্বীকার করেছে আটক বিলাস মিয়া (২৫)। গতকাল আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বিলাস হত্যার দায় স্বীকার করে তার সাথে জড়িত আরো ৫ জনের নাম প্রকাশ করেছে। এ ঘটনায় নিহত তৌহিদুর রহমান সাবাজের পিতা মাতাব আলী বাদী হয়ে ৫জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৪/৫জনের বিরুদ্ধে হত্যা, চুরি ও অপহরণের অভিযোগ এনে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার আসামীরা হচ্ছে-হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লুকড়া গ্রামের মৃত সিদ্দিক আলীর পুত্র বিলাশ (২৫), একই গ্রামের জজ মিয়ার পুত্র বিলাল (১৮), আব্দুস শহীদের পুত্র হাসেম (২১), সারাজ মিয়ার পুত্র সিরাজ (১৮) এবং বানিয়াচঙ্গের জাতুকর্ণ পাড়ার মাখন চক্রবর্তীর পুত্র সুজন (২৩)। মামলাটি তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এসআই জুয়েল সরকারকে।
অপরদিকে টমটম চালকরা ঘাতকদের শাস্তির দাবিতে হবিগঞ্জ শহরের প্রধান সড়ক কালীবাড়ি ও থানার সামনে অবরোধ ও বিক্ষোভ করে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আরো ২ জনকে আটক করা হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে। তবে তাদের নাম পাওয়া যায়নি।
এদিকে গতকাল রাতে মঙ্গলবার রাত প্রেস ব্রিফিংকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেন অতিরিক্ত পুলিশ (সদর সার্কেল) মোঃ রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন-সোমবার আনোয়ারপুরের মাতাব আলী ছেলে তৌহিদুর রহমান সাবাজ (২৫) বাড়ি থেকে ইফতার শেষে একটি ইজিবাইক (টমটম) নিয়ে বের হয়। রাত ৯টার দিকে ঘাতক বিলাশসহ তার আরো ৫/৬জন সহযোগী পাইকপাড়া যাবার জন্য সাবাজের টমটম রিজার্ভ নিয়ে কামড়াপুর-নসরতপুর বাইপাস সড়ক দিয়ে রওয়ানা দেয়। ধুলিয়াখাল এলাকায় নির্মাণাধিন বিজিবি ক্যাম্পের কাছে যাওয়ার পর ঘাতকরা সাবাজকে ঝাপটে ধরে। এক পর্যায়ে সাবাজের হাত পা মুখ বেঁধে গলায় গামছা পেছিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে তাকে হত্যা করে ঘাতকরা। হত্যার পর তারা টমটমের লক খুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে হবিগঞ্জ সদর থানার টহলরত পুলিশ গাড়ী থামিয়ে টমটমে থাকার ঘাতক বিলাশকে জিজ্ঞাসাবাদকালে দেখতে পান তার হাতে রক্ত। এতে পুলিশের সন্দেহ হয়। তাৎক্ষণিক পুলিশ টর্চ লাইট জ¦ালিয়ে রাস্তার পাশে সাবাজের মরদেহ দেখতে পান। এ সময় পুলিশ ঘাতক বিলাশকে গ্রেফতার করলেও অন্যান্য ঘাতকরা পালিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনারস্থল থেকে টমটম ও নাম্বার বিহীন ১টি মোটরসাইকেল, ছুরিসহ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করে। মঙ্গলবার নিহত সাবাজের লাশের ময়না তদন্ত পারিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে লোকড়া গ্রামের বিলাস মিয়াকে হবিগঞ্জের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। প্রায় ২ ঘন্টাব্যাপী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
গত সোমবার রাত ৯টার দিকে পাইকপাড়া যাওয়ার জন্য টমটম রিজার্ভ করে ঘাতক বিলাসসহ সঙ্গীরা। পথিমধ্যে তাকে মারপিট করে টমটমটি ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় সাবাজ তাদেরকে চিনে ফেলে। এ কারণে ঘাতকরা তাকে গামছা দিয়ে পেছিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ধুলিয়াখাল বাইপাস এলাকায় একটি ঝোপের মধ্যে ফেলে দেয়। হত্যার পর তারা টমটমের লক খুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় হবিগঞ্জ সদর থানার টহলরত পুলিশ আসতে দেখে অন্যান্যরা গা ঢাকা দিলেও টমটমের চালকের স্থানে ঘাতক বিলাশ বসা থাকে। এ সময় পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদকালে দেখতে পান তার হাতে রক্ত। এতে পুলিশের সন্দেহ হয়। তাৎক্ষণিক পুলিশ টর্চ লাইট জ¦ালিয়ে রাস্তার পাশে সাবাজের মরদেহ দেখতে পান। এ সময় পুলিশ বিলাশকে গ্রেফতার করলেও অন্যান্য ঘাতক পালিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে টমটম ও নাম্বার বিহীন ১টি মোটর সাইকেল, ছুরিসহ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করে।
কোর্ট সূত্রে জানা যায়, বিলাস লোমহর্ষক হত্যার ঘটনা বর্ণনা দেয় এবং তাদেরকে চিনে ফেলার কারণেই সাবাজকে হত্যা করে লাশ গুম করার চেষ্টা করছিল।
এদিকে গতকাল দুপুরে হবিগঞ্জ শহরের প্রধান সড়ক কালীবাড়ি এলাকায় টমটম চালকরা সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে। পরে ঘাতকদের শাস্তির দাবিতে থানার সামনে অবরোধ করে রাখে। দুই ঘন্টা পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রবিউল ইসলামের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেয়া হয়।
নিহত সাবাজের পরিবার সূত্রে জানা যায়, সাবাজই তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি। হবিগঞ্জ সরকারী বৃন্দাবন কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে কোন চাকুরী না পেয়ে অভাবের তাড়নায় টমটম চালিয়ে পরিবারের হাল ধরে। বিবাহ যোগ্য তিন বোনকে নিজ খরচে বিয়ে দেয়।
Leave a Reply