নুর উদ্দিন সুমন ॥ হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে পাহাড় কেটে বালু উত্তোলন ২টি বোমা মেশিন জব্দ করে ধ্বংস করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। এ সময় বালু উত্তোলনকারী চক্রের সদস্য পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। বৃহস্পতিবার দুপুরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) স ম আজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে চুনারুঘাট থানা পুলিশের সহযোগীতায় উপজেলার রাণীগাঁও ইউনিয়নের মনিপুর, সোনাঝুড়া ও হাকাজুড়া এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালান। এ সময় বালু উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত দুইটি বোমা মেশিন ও যন্ত্রাংশ জব্দ করে এগুলো পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। অভিযানের খবর পেয়ে বালু খেকোরা মেশিন সরাতে ব্যর্থ হয়ে অনেকে বালু খাদে ফেলে পালিয়ে যায়। সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চা-বাগানের পাহাড়ি টিলা , ছড়া ও পতিত থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলে আসছে। প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং বালু উত্তোলনকারীরা প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করে অবাধে বালু উত্তোলন হওয়ায় রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, ছড়া-খাল ধসে পড়ছে। ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় শুধু ছড়ার বালু নয় বালু উত্তোলনকারীদের থাবা পড়েছে কৃষি ও সরকারি খাস জমিতেও। বালু উত্তোলনকারীরা মাটির ৬০-৭০ ফুট গভীরে গর্ত করে এস্কেভেটর ও বোমা মেশিন ব্যবহার করে মাটি কেটে সমতল ও কৃষি ভূমি উজার করছে। অবৈধ বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে প্রভাবশালীদের নিয়ে গড়ে উঠেছে এক শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটে জড়িয়ে পড়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারাও। তারা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) স ম আজহারুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অনেকগুলো সফল অভিযান পরিচালিত হয়। ইতোমধ্যে ওই সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে ২ বোমা মেশিন নষ্ট করে খাদে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া অভিযানের খবর পেয়ে অনেকে মেশিন ফেলে পালিয়ে যায়। এসব মেশিন ধ্বংস করার জন্য আগামীতে অন্যান্য এলাকায় এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে। সূত্র জানায়, টিলা ও সমতল নিয়ে চুনারুঘাট উপজেলার রাণীগাঁও ইউনিয়নের হাকাজুরা ও মনিপুর এলাকা। এখানের বাসিন্দারা শান্তপ্রিয়। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় বালু খেকোদের নজর পড়ে এ স্থানটিতে। পরিবেশ বিপন্ন করে প্রভাবশালী চক্র দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন করছে। যার ফলে টিলা ও রাস্তার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এসবের প্রতি তোয়াক্কা না করে চক্রের সদস্যরা দিবারাত্রী বোমা মেশিনে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে। আলাপকালে স্থানীয়রা জানায়, প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার বালু বিক্রি করা হলেও পরিবেশের বারটা বেজে গেছে। মনিপুর ও হাকাজুরার টিলা ও সমতল এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করে পারকুল চা বাগানের প্রায় ৪ কিলোমিটার রাস্তা ব্যবহার করে ট্রাক-ট্রাক্টর করে বালুগুলো আনা নেওয়া করা হচ্ছে। এতে করে রাস্তাটির বেহাল দশায় পতিত হয়েছে। এ রাস্তা দিয়ে গ্রামবাসী চলাচল করেত দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল নামলেই পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়-টিলায় ধস নামে। শুকনো মৌসুমে বর্ষার আগে বালুখেকোরা অবাধে পাহাড়-টিলা কেটে-খুঁড়ে ছিন্নভিন্ন অবস্থায় ফেলে রাখে। আর বৃষ্টিপাত শুরু হলেই সেসব টিলার ভেতর বৃষ্টির পানি ঢুকে পাহাড়ে-টিলায় ভয়াবহ ধস নামে।
Leave a Reply