হবিগঞ্জ সংবাদদাতাঃ তিউনিসিয়া উপকূলে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনায় হবিগঞ্জের বৃন্দাবন সরকারি কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিখোঁজ রয়েছেন। তারা হলেন- হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লোকড়া গ্রামের হাজী আলাউদ্দিনের পুত্র আব্দুল কাইয়ুম (২২) ও আব্দুল জলিলের পুত্র আব্দুল মোক্তাদির (২২)।
নৌকাডুবির পর জেলেদের তৎপরতায় উদ্ধার পেয়ে মামুন নামের তাদের এক সহপাঠী সেখান থেকে বাড়িতে ফোন করে এই তথ্য জানিয়েছেন।
একসঙ্গে রওনা হয়ে চার বন্ধুর একজন ইতালি পৌঁছালেও বাকি তিনজনের একজন উদ্ধার ও দুইজন নিখোঁজ রয়েছেন। ইতালি যাওয়ার জন্য বের হয়ে গত ৯ মে রাতে আব্দুল কাইয়ুম ও আব্দুল মোক্তাদির নৌকায় ওঠেন। এসময় তাদের সঙ্গে ছিলেন একই গ্রামের মামুন মিয়া (২২) এবং নূরুল আমীন (২৮)। দুটি নৌকায় ভাগ করে যাত্রীদের নেয়া হয়েছে।
প্রথম নৌকায় নূরুল আমীন উঠেছিলেন। সেটি ডোবেনি বলে তিনি ইতালি পৌঁছাতে পেরেছেন। আর পরবর্তী নৌকায় বাকি তিনজন উঠেছিলো। নৌকাটি তিউনিসিয়া উপকূলে ডুবে যায়। তাদের মধ্যে মামুন মিয়া উদ্ধার হন।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লোকড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরহাদ আহমেদ আব্বাছ বলেন, ‘আমাদের গ্রামের মামুন মিয়াও ডুবে যাওয়া নৌকার মধ্যে ছিলেন। কিন্তু ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন। তিনিই ফোন করে এই তথ্য জানিয়েছেন। দুই শিক্ষার্থীর বিষয়টি পুলিশ ও জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।’
নিখোজ আব্দুল কাইয়ুমের বাবা হাজী আলাউদ্দিন জানান, গত বুধবার তার ছেলে বাড়িতে ফোন করে ইতালি যাওয়ার বিষয়টি জানায়। এরপর তার সহপাঠী মামুন ফোন করে নৌকাডুবির ঘটনায় কাইয়ুমের নিখোঁজের তথ্য জানিয়েছে।
হবিগঞ্জ সদর থানার ওসি মুহাম্মদ সহিদুর রহমান জানান, তিউনিসিয়ায় নৌকাডুবির ঘটনায় লোকড়া গ্রামের দুই যুবক নিখোঁজের বিষয়টি জানা গেছে।
তিউনিসিয়ায় রেড ক্রিসেন্টের কর্মকর্তা মঙ্গি স্লিম বলেন, নৌকাটিতে প্রায় ৭৫ জন আরোহী ছিলেন। তাদের সবাই পুরুষ। তাদের মধ্যে ৫১ জনই বাংলাদেশি। তিউনিসিয়ার জেলেরা নৌকার আরোহীদের মধ্যে ১৬ জনকে উদ্ধার করেন। তাদের মধ্যে ১ শিশুসহ ১৪ জন বাংলাদেশি।
বেঁচে যাওয়া লোকজন তিউনিসিয়া রেড ক্রিসেন্টের জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে লিবিয়ার উপকূল থেকে ৭৫ জন অভিবাসী একটি বড় নৌকায় চড়ে ইতালির উদ্দেশে রওয়ানা হয়। গভীর সাগরে বড় নৌকাটি থেকে অপেক্ষাকৃত ছোটো একটি নৌকায় তাদের তোলা হলে কিছুক্ষণের মধ্যে সেটি ডুবে যায়।
তিউনিসিয়ার রেড ক্রিসেন্ট কর্মকর্তা মঙ্গি স্লিমকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, রাবারের তৈরি নৌকাটি ১০ মিনিটের মধ্যে ডুবে যায়।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) জানায়, অভিবাসীবাহী নৌকাটি বৃহস্পতিবার লিবিয়ার জুওয়ারা থেকে রওনা হয়। ইতালি যাওয়ার পথে নৌকাটি ডুবে যায়।
বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, নৌকাটি প্রবল ঢেউয়ের মধ্যে পড়ে ডুবে যায়।
তিউনিশিয়ার রেড ক্রিসেন্টকে উদ্ধৃত করে মার্কিন বার্তা সংস্থা ‘এপি’ জানিয়েছে, তিউনিশিয়ার উপকূলে অভিবাসীবাহী নৌকাডুবিতে যারা প্রাণ হারিয়েছে, তাদের মধ্যে ৩৭ জন বাংলাদেশি রয়েছে।
তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এ নৌকাডুবিতে কতজন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হলে তা দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।
Leave a Reply