নুর উদ্দিন সুমন ॥ চা-কফি ও কফির মেশিনের পরিবর্তে ৩ ট্রাক ভর্তি ২৪ হাজার কেজি বালু প্রেরণ করে রোজ ক্যাফে কোম্পানীর সাথে প্রতারণা করার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় হবিগঞ্জের ডিলার গ্রেফতার হয়েছে। ১০ মে হবিগঞ্জের সিআইডির ইন্সপেক্টর কদ্দুছ মুন্সি’র নেতৃত্বে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঢাকার দক্ষিণ বনশ্রী এলাকা থেকে তাজুল ইসলাম(৪০)কে গ্রেফতার করে। সে হবিগঞ্জ শহরতলীর গোবিন্দপুরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী হাজী হরমুজ আলীর ছেলে। এছাড়া এ অভিযানে সার্বিক সহযোগীতায় ছিলেন হবিগঞ্জের সিআইডির ইন্সপেক্টর আব্দুর রাজ্জাক।
সূত্র জানায়, রোজ ক্যাফে বাংলাদেশ লিমিটেডের অপারেশন ডিরেক্টর রফিকুল ইসলাম খানের দায়ের করা মামলায় ওই ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে এ ঘটনায় ১৩ মার্চ তার পিতা হবিগঞ্জ শহরের ব্যবসায়ী হাজী হরমুজ আলীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেই সাথে বালুর কার্টুন ভর্তি গাড়িগুলো জব্দ করে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হবিগঞ্জের সিআইডির ইন্সপেক্টর কদ্দুছ মুন্সি জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ হবিগঞ্জ শহরের ‘আদি খাঁজা বেনু’ নামে এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রোজ ক্যাফে বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিবেশক হিসেবে সিলেট, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়োজিত ছিল।
সম্প্রতি ডিলার এবং কোম্পানীর মধ্যে মতভেদ দেখা দিলে ডিলারশীপ বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক কোম্পানী কর্তৃপক্ষ ডিলারের জামানতের টাকা ফেরত দেয়। বিনিময়ে ডিলারের কাছে থাকা কোম্পানীর ১২ হাজার প্যাকেট চা, ১২ হাজার প্যাকেট কফি এবং ৩৪টি কফির মেশিন ফেরত দেয়ার কথা। জামানতের টাকা ফেরত পেয়ে গত ৯ মার্চ কোম্পানীর মালামাল ফেরত পাঠান ডিলার। এতে ১২ হাজার প্যাকেট চা, ১২ হাজার প্যাকেট কফি এবং ৩৪টি কফির মেশিন থাকার কথা ছিল। কোম্পানীর হিসাবমতে যার বর্তমান বাজার মূল্য ১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। কিন্তু গাড়িতে পাওয়া যায় ২৪ হাজার কেজি বালু এবং কফি ও মেশিনের পারিবর্তে অনেকগুলো খালি কার্টুন। ট্রাকে বালু ও খালি কার্টুন দেখে বিষ্মিত হয় কোম্পানী কর্তৃপক্ষ।
এ প্রতারণার ঘটনায় কোম্পানী কর্তৃপক্ষ এগুলো হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় প্রেরণ করেন এবং কোম্পানীর অপারেশন ডিরেক্টর রফিকুল ইসলাম খান বাদী হয়ে হাজী হরমুজ আলী ও তার ছেলে তাজুল ইসলামসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ হরমুজ আলীকে গ্রেফতার করে। এ সময় মামলার অপর আসামী হরমুজ আলীর ছেলে তাজুল ইসলাম পলাতক ছিলেন।
অবশেষে ২০ এপ্রিল এ মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। সিআইডির ইন্সপেক্টর কদ্দুছ মুন্সি এ মামলার তদন্তভার পেয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করায় এ পর্যন্ত একাধিক অভিযানে পলাতক আসামী তাজুল ইসলামসহ ৮ লাখ টাকার মালামাল উদ্ধার হয়েছে।
মামলার বাদী রফিকুল ইসলাম খান জানান, এত বড় প্রতারণা এর আগে কোনো কোম্পানীর সাথে হয়েছে বলে তার জানা নেই। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষ বিচার দাবি জানান তিনি।
হবিগঞ্জের সিআইডির ইন্সপেক্টর কদ্দুছ মুন্সি জানান, প্রতারক তাজুল ইসলামকে ঢাকা থেকে আটক করা হয়েছে। অন্যদেরকে ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। বাকী মালামাল উদ্ধারেরও চেষ্টা চলছে।
Leave a Reply