নিজস্ব প্রতিনিধি: বাস চাপায় সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিহত ছাত্র নবীগঞ্জের সন্তান মোহাম্মদ ওয়াসিম ঘোরী হত্যাকান্ডের ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে নবীগঞ্জ। হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল, মহাসড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে এলাকাবাসি। ঘটনায় আটক চালক-হেলপারদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী করেছে নিহত ওয়াসিমের আত্মীয়স্বজনরা। এদিকে ঘটনার সাথে জড়িত আটক বাস চালক জুয়েল মিয়া ও হেলপার মাসুক আলী ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে মৌলভীবাজার পুলিশ জানায়। এর পূর্বে রাতেই সুনামগঞ্জ থেকে হেলপার মাসুক আলী ও সিলেটের কদমতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে চালক জুয়েল মিয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত শনিবার বিকেলে ওয়াসিমসহ ১১ জন শিক্ষার্থী নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়ায় বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে তারা সিলেট রোডের উদার পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। ভাড়া নিয়ে বাসের হেলপারের সঙ্গে তাদের তর্কবির্তক হয়। এক পর্যায়ে বাসের হেলপার মাসুক আলী ওয়াসিমকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়। এতে ওয়াসিমের পায়ের উপর দিয়ে বাসের পিছনের চাকা চলে যায়। স্থানীয় লোকজন রক্তাক্ত ওয়াসিমকে সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষনা করেন। এ ঘটনার পর থেকেই গোটা সিলেটজোরে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেনীপেশার লোকজন।
এদিকে গতকাল সকাল থেকেই নিহত ওয়াসিমের বাড়িতে এলাকাবাসি তাকে এক নজর দেখার জন্য ভীড় জমিয়েছে। দূর দুরান্ত থেকে ওয়াসিমের সহপাঠীরা ছুটে আসে তার বাড়িতে। ওয়াসিমের পিতা-মাতা-আত্মীয়স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার আকাশ ভারী হয়ে উঠে। শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়ে গোটা উপজেলা। এ যেন এক নিস্তব্দ নিরবতা। দুপুরের দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দেবপাড়ায় ঘাতকদের শাস্তির দাবীতে মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসি। এ সময় শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করলে রাস্তার দু’পাশে যানবাহন আটকা পড়ে। ক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে এলাকাবাসি। এ সময় বক্তারা বাস চালক ও হেলপারের শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
দুপুর ২টায় গ্রামে ওয়াসিমের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় স্থানীয় এমপি শাহনওয়াজ মিলাদ গাজীসহ হাজার হাজার লোকজন অংশ গ্রহন করেন। জানাজা শেষে অশ্র“সিক্ত নয়নে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এ ব্যাপারে নিহত ওয়াসিমের পিতা অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী আবু জাহেদ মাহবুব জানান, আমার একমাত্র সন্তান ছিল ওয়াসিম। আমার সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। তিনি পুত্র হত্যার জন্য দায়ী ঘাতক বাস চালক ও হেলপারের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবী করেন।
নিহতের মা ডা. মীনা পারভিন নিজের একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে শোকে কাতর। সন্তানকে হারিয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। তিনি তার সন্তান হত্যার জন্য ঘাতকদের ফাঁসি দাবী করেন।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল হোসেন জানান, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষনিক ওয়াসিমের বাড়িতে ছুটে যান। এ ঘটনায় পুরো উপজেলার মানুষ মর্মাহত হয়েছেন।
শাহ নেওয়াজ মিলাদ গাজী এমপি জানান, সড়কে এরকম মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। এ ঘটনায় আমি মর্মাহত ও শোকাহত। নিহতের পরিবারকে শান্তনা দেয়ার ভাষা আমার নেই। তবে এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্ঠান্ত মুলক শাস্তি হবে বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply