ডেস্ক রিপোর্টঃ সিলেটের তামাবিল, শেওলা ও হবিগঞ্জের বাল্লা স্থলবন্দরের পাশাপাশি আরো একাধিক স্থলবন্দর সিলেট অঞ্চলে করা যায় কি না, তা ভাবছে সরকার। আর এ লক্ষ্যে সিলেট, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জের ৪টি শুল্ক স্টেশনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর কাজ শুরু করেছে। এগুলো হলো সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ, জকিগঞ্জ শুল্ক স্টেশন, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার চাতলাপুর, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বড়ছড়া। সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে এগুলোর মধ্যে এক বা একাধিক শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দর ঘোষণা করা হবে।
এছাড়াও দেশের আরো ২টি শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দর ঘোষণার সম্ভাব্যতা যাচাই কাজ চলছে।
রোববার জাতীয় সংসদে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, বাংলাদেশে বর্তমানে স্থলবন্দরের সংখ্যা ২৩টি। সিলেটের ৪টিসহ আরো ৬টি স্থলবন্দরের সম্ভাবনা যাচাই করা হচ্ছে। জাতীয় সংসদে নওগাঁ-২ আসনের এমপি মো. শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এই তথ্য জানিয়েছেন।
প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানান দেশে ঘোষিত স্থলবন্দরগুলো হলো-বেনাপোল (যশোর), বুড়িমারী স্থলবন্দর (লালমনিরহাট), আখাউড়া স্থলবন্দর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), সোনামসজিদ স্থলবন্দর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ), হিলি স্থলবন্দর (দিনাজপুর), ভোমরা স্থলবন্দর (সাতক্ষীরা), বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর (পঞ্চগড়), বিরল স্থলবন্দর (দিনাজপুর), টেকনাফ স্থলবন্দর (কক্সবাজার), তামাবিল স্থলবন্দর (সিলেট), গোবড়াকুড়া-কুড়ইতলি স্থলবন্দর (ময়মনসিংহ), বিবির বাজার স্থলবন্দর (কুমিল্লা), দর্শনা স্থলবন্দর (চুয়াডাঙ্গা), বিলোনিয়া স্থলবন্দর (ফেনী), নাকুগাঁও স্থলবন্দর (শেরপুর), রামগড় স্থলবন্দর (খাগড়াছড়ি), সোনাহাট স্থলবন্দর (কুড়িগ্রাম), তেগামুখ স্থলবন্দর (রাঙামাটি), চিলাহাটি স্থলবন্দর (নীলফামারী), দৌলতগঞ্জ স্থলবন্দর (চুয়াডাঙ্গা), ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দর (জামালপুর), শেওলা স্থলবন্দর (সিলেট) ও বাল্লা স্থলবন্দর (হবিগঞ্জ)।
এছাড়া সিলেটের সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ, জকিগঞ্জ শুল্ক স্টেশন, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার চাতলাপুর, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বড়ছড়া, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুর, কুড়িগ্রামের রৌমারী, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ধুমধুম, শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দর ঘোষণার বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে।
সিলেট চেম্বারের সাবেক প্রশাসক ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, শুল্ক স্টেশন আর স্থলবন্দরের মধ্যে তফাৎ আকাশ পাতাল। শুল্ক স্টেশনে ব্যবসায়ীরা মালামাল নিজ দায়িত্বে আমদানি রফতানি করে থাকেন। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের সরকারি সুবিধা পান না তারা। তবে স্থলবন্দর হলে কাগজে কলমে আমদানি, রফতারিকারকদের বিপুল পরিমাণ সুবিধা নিশ্চিতের কথা উল্লেখ রয়েছে।
তিনি বলেন, সিলেটের একাধিক শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দর ঘোষণার সম্ভাব্যতা যাচাই অবশ্যই সুখকর। তবে খেয়াল রাখতে হবে, এই প্রক্রিয়ায় যাতে কোনো ধরনের রাজনৈতিক সুবিধাভোগীরা হস্তক্ষেপ করতে না পারে। কারণ রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সময় কাছাকাছি থাকলে পরবর্তীতে নানা ধরণের অপকর্ম করবে। তাদের অপকর্মের শুরুটা সচরাচর হয় স্থলবন্দরের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া থেকে। তারা নিজেদের স্বার্থে স্থলবন্দরের স্থান নির্ধারণে ভূমি এদিক সেদিক করে নিজেদের ভূমিতে নিয়ে অধিক টাকা আদায়ের পাঁয়তারা করে।
ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, সিলেটের জকিগঞ্জ ও ভোলাগঞ্জ শুল্ক স্টেশন ভৌগলিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। এ দুটি শুল্ক স্টেশনের মধ্যে জকিগঞ্জকে স্থলবন্দর ঘোষণা করা হলে রফতানিতে উল্লেখযোগ্য রাজস্ব আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ জকিগঞ্জ সীমান্তের ওপারে ভারতের শুরুত্বপূর্ণ তিনটি রাজ্য রয়েছে। এগুলো হলো আসাম, মনিপুর ও নাগাল্যান্ড।
একই ভৌগলিক সীমারেখায় হওয়ার কারণে এ তিনটি রাজ্যের বাসিন্দাদের সাথে বাংলাদেশি জীবনযাত্রার অভূতপূর্ব মিল রয়েছে। এছাড়া ভোলাগঞ্জের ওপারে মেঘালয় রাজ্যেও বাংলাদেশি পণ্যের বিপুল চাহিদা রয়েছে। এ দুটি শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দর ঘোষণা করে অবকাঠামো উন্নয়নসহ ওয়্যার হাউজ, কুলার স্থাপন করা হলে রফতানিতে অবদান রাখতে পারবে। এ দুটি শুল্ক স্টেশন দিয়ে খাদ্যসামগ্রী, তুলা, প্লাস্টিক সামগ্রী, সিমেন্ট, মেলামাইন, ক্লোরিন গ্যাস, আসবাবপত্র, বিভিন্ন ধরণের মাছ, খেল, ডিউরেবল প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন পণ্য রফতানিতে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হবে।
জকিগঞ্জ ও ভোলাগঞ্জ শুল্ক স্টেশনের সাথে সিলেট নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থাও উন্নত হচ্ছে। সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ সড়কে প্রায় ৭শ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে সড়ক। এছাড়া জকিগঞ্জ শুল্ক স্টেশনে যাওয়ার রাস্তাও অনেকটা সহনীয়। একটি বাইপাস রাস্তা নির্মিত হলে জকিগঞ্জ শহর এড়িয়ে সহজেই মালবাহী গাড়িগুলো শুল্ক স্টেশনে পৌঁছতে পারবে।
অপরদিকে সুনামগঞ্জের বড়ছড়া ও মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার চাতলাপুর শুল্ক স্টেশন এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে। বড়ছড়া ও চাতলাপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা তেমন উন্নত নয়। সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে এ চারটি শুল্ক স্টেশনের মধ্যে এক বা একাধিক স্থলবন্দর ঘোষণা করা হলে আন্তমহাদেশিয় ব্যবসায় সিলেট আরেকধাপ এগিয়ে যাবে বলে অভিমত ব্যবসায়ীদের।
সিলেট কাস্টমস সূত্র জানায়, সিলেট জেলায় ভোলাগঞ্জ ও জকিগঞ্জ, সুনামগঞ্জে ছাতক, চেলা, ইছামতি, বড়ছড়া, বগলী, চারাগাঁও, মৌলভীবাজারে মুড়ি (বেতুলী), চাতলাপুর শুল্ক স্টেশন দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়।
এসবের মধ্যে আমদানি পণ্য হলো কয়লা, পাথর, চুনাপাথর, ক্লিংকার, সাতকরা, শুঁটকি, টমেটো, আদা, পিঁয়াজ, পান, রো-হাইস্কিল, হ্যালমেট, বে-লীফ, আঙ্গুর, আম, কলা, আনারস, লিচু ও ভাঙ্গা কাঁচ।
রফতানি পণ্যের তালিকায় রয়েছে, বিভিন্ন ধরণের খাদ্যসামগ্রী, তুলা, প্লাস্টিক সামগ্রী, সিমেন্ট, মেলামাইন, ক্লোরিন গ্যাস, আসবাবপত্র, বিভিন্ন ধরনের মাছ, খৈল, ডিউরেবল প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন পণ্য।
Leave a Reply