ঢাকা থেকে দুবাইগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী পলাশ আহমেদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের পিরোজপুরের দুধঘাটায় পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
পলাশের বাবা পিয়ার জাহান বলেন, ছেলের লাশ দেখা বা গ্রহণ করার কোনো ইচ্ছা তার ছিল না। স্বজনদের চাপে ও প্রশাসন তাকে ডাকায় সোমবার রাতে তিনি লাশ নিতে চট্টগ্রামে যান।
সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন পলাশের বাবা। শনাক্তের পর যাচাই-বাছাই শেষে তিনি লাশ গ্রহণ করেন। লাশ নিয়ে রাতেই তিনি নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেন বলে জানান পতেঙ্গা থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া। রাতেই পিয়ার জাহান সরদার পলাশের মরদেহ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন।
পলাশের বাবা পিয়ার জাহান জানান, পতেঙ্গা পুলিশের কাছ থেকে লাশ নিয়ে মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জে পৌঁছান। সকাল ৯টার দিকে জানাজা শেষে পলাশকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এর আগে সোমবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে পলাশের মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছিল।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এদিকে রাতে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সিভিল এভিয়েশন বিভাগের প্রযুক্তি সহকারী দেবব্রত সরকার বাদী হয়ে পলাশসহ অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তিকে আসামি করে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও অপরাধ দমন আইনে পতেঙ্গা থানায় মামলা করেন।
এর আগে পলাশের মরদেহ গ্রহণ ও দাফন করতে আপত্তি জানান তার বাবা পিয়ার জাহান।
এ সময় পলাশের বাবা পিয়ার জাহান জানান, ৫ বছর ছেলের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক নেই। ওর উচ্ছৃঙ্খল জীবন নিয়ে এতটাই অতিষ্ঠ ছিলেন যে, একপর্যায়ে তিনি কামনা করেন, হয় ছেলে ভালো হোক, না হয় মারা যাক। বিমান ছিনতাই করতে গিয়ে পলাশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন তিনি।
ছেলের লাশ আনার ব্যাপারে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। সরকার লাশ দিতে চাইলে লাশ গ্রহণ করবেন। নতুবা লাশও আনতে যাবেন না তারা।
পিয়ার জাহান অনেক বছর বিদেশে ছিলেন। প্রথমে কুয়েত এবং পরে সৌদি আরবে প্রবাস জীবন কাটান তিনি। আর তার পাঠানো টাকা-পয়সা নিয়ে উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করে আসছিল পলাশ। এর মধ্যে নাচ-গান থেকে শুরু করে চলচ্চিত্রশিল্পে পর্যন্ত জড়ায় সে। কয়েকটি শর্টফিল্মও তৈরি করে। একপর্যায়ে ঢাকায় থাকা শুরু করে।
বাড়িতে তেমন যাওয়া-আসা ছিল না। মাঝেমধ্যে টাকার প্রয়োজন হলে বাড়ি আসত। পিয়ার জাহান সাত বছর আগে স্থায়ীভাবে দেশে চলে আসেন। পলাশ তার পাঠানো সব টাকা নষ্ট করেছে।
বাধ্য হয়ে এলাকায় একটি মুদি দোকান দিয়ে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। পলাশরা চার ভাইবোন। এর মধ্যে তিনজন বোন। মা রেনু আক্তার গৃহিণী।
পিয়ার জাহান বলেন, ২০-২৫ দিন আগে বাড়িতে আসে পলাশ। সাধারণত বাড়িতে সে এতদিন থাকে না। এ সময়ের মধ্যে অনেকটা পাল্টে যায় সে। মসজিদে যাওয়া-আসা করে, এমনকি নামাজের জন্য আজানও দেয়। গত শুক্রবার বাসা থেকে বিদায় নেয়ার সময় তার মাকে বলে যায়, ভ্রমণ ভিসায় সে দুবাই যাচ্ছে। তবে দুবাই যাওয়ার বিষয়ে আমাকে কিছুই বলেনি।
প্রসঙ্গত, ২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে পলাশ আহমেদ। সেনাবাহিনীর সদস্যদের ৮ মিনিটের কমান্ডো অভিযানে পলাশ নিহত হন।
সুত্রঃ যুগান্তর
Leave a Reply