স্থানীয় প্রতিনিধি : চুনারুঘাটে সাব-রেজিষ্ট্রারের বিরুদ্ধে অভিযোগ” চা-শ্রমিককে বিক্রেতা সাজিয়ে কোটি টাকার জমির দলিল” শীর্ষক সংবাদ প্রকাশের পর চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনা এখন সেখানকার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রূপান্তরিত হয়েছে। এদিকে এ অনিয়মের খবর প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেছে দুদক। গতকাল রবিবার সারাদিন দুদুকের দুই কর্মকর্তা সেখানে খোজখবর নেন। সাবরেজিষ্ট্রার অফিস, সেটেলমেন্ট অফিস, উপজেলা ভূমি অফিসে তদন্ত কাজ শেষ করে তারা যান আলোচিত ভূমির সরেজমিন অবস্থা দেখতে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রবিবার সকালে জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক অজয় কুমার সাহা এবং ডিএডি আব্দুল মালেক সারাদিন সেখানে অবস্থান এবং বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন।
দুদক উপ-পরিচালক অজয় কুমার সাহা বলেন, আমরা সারাদিন তথ্য সংগ্রহ এবং তদন্ত করেছি। এই তদন্তের ভিত্তিতে একটি রিপোর্ট প্রদান করা হবে। তবে আরও তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। এখানে দূর্নীতির মাধ্যমে দলীল সৃষ্টি করার যে অভিযোগটি এসেছে সেটি ভাল করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তকার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন কিছু বলা টিক হবে না। ১৯৫৬ সালে দলিল করে ওই জায়গা ক্রয় করার পর এখন পর্যন্ত কোন নামজারি করা হয়নি। আর সাবরেজিষ্টার এই অবস্থায় ভূয়া ক্রেতা দিয়ে দলিল সম্পাদক করাও সঠিক হয়নি।
দুদকের অপর একটি সুত্র জানায়, এই ভূমি নিয়ে অনেক জটিলতা রয়েছে। তদন্তে আলোচিত ভূমির কিছু অংশ ইব্রাহিম কবির গংদের দখলে থাকলেও উভয় অন্য পক্ষের দাবী তাদের দখলেও বেশ কিছু জমি আছে।
প্রসঙ্গত, চুনারুঘাট উপজেলার সাবরেজিষ্ট্রার নিতেন্দ্র লাল দাশ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে দুই চা শ্রমিককে ভূয়া বিক্রেতা সাজিয়ে দলিল সৃষ্টি করে কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা করেন। ওই জমি নিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তিনি এর তোয়াক্কা করেননি। পরে চা শ্রমিকরা এফিডেভিট করে তা স্বীকার করেন এবং সাবরেজিষ্ট্রারসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দায়ের করেন।
চুনারুঘাট উপজেলার দেওরগাছ মৌজার ১১৯নং এসএ খতিয়ানের ১০৭৪ এস এ দাগের ২.৬৪ একর ভূমির এস এ রেকর্ডীয় মালিক ছিলেন, দেওরগাছ ইউনিয়নের আমকান্দি গ্রামের মহেশপাল এর ছেলে হেমন্ত পাল এবং দেবেন্দ্র পালের এর ছেলে দীগেন্দ্র পাল। এস এ রেকর্ডের মালিকরা ওই জমি ১৯৫৬ সালে ৭৪০নং দলিলে বিক্রয় করেন ওই এলাকার মুনছর আহম্মদ এর নিকট। এস এ রেকর্ডে হেমন্ত পালদের নাম ভূলবশত পালের স্থলে দাস লিখা হয়। এ অবস্থায় একটি চক্র সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ওই জায়গার বর্তমান মালিক ইব্রাহিম কবির গংদের নাম না দিয়ে এস এ রেকর্ডিয় মালিক হেমন্ত পালদের নাম রেখে দেয়। কিন্তু পাল না দিয়ে সেখানেও দাস উল্লেখ করা হয়। ইব্রাহিম কবির গং বিষয়টি জানতে পেরে আদালতে মামলা দায়ের করলে আদালত এই জমির উপর গত বছরের ৩০ আগস্ট অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন। ইব্রাহিম কবির উক্ত জমি অবৈধ ব্যক্তির নামে রেজিষ্ট্রি না করার জন্য ২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তারিখে সাবরেজিষ্টার বরাবর একটি আবেদন করেন। নিতেন্দ্র লাল দাস সাবরেজিষ্টার হিসাবে যোগদান করার পর ভূয়া ক্রেতাদের মাধ্যমে দলিল সম্পাদন করেন। গেলানী চা বাগানের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক বাশুদেব মুড়াকে দিগেন্দ্র চন্দ্র দাস এবং লস্করপুর চা বাগানের শ্রমিক নিপেন বাকতিকে হেমেন্দ্র চন্দ্র দাস নাম দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করার পর তারা এই দলিল করেন।
সাবরেজিষ্টার নিতেন্দ্র লাল দাস স্বীকার করেন কোন এক নেতার অনুরোধে তিনি এ দলিল সম্পাদন করে ছিলেন।
Leave a Reply