শেখ মোঃ হারুনুর রশিদ,চুনারুঘাট থেকে: হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার কৃতি সন্তান,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি তিতুমীর কলেজ(ঢাকা)-এর ব্যবস্থাপনা বিভাগের মেধাবী ছাত্র মোঃ সাইদুজ্জামান তরফদার(তানভীর) উচ্চ শিক্ষার জন্য আমেরিকা যাচ্ছেন।তিনি আমেরিকার আরভিন ক্যালিফোর্নিয়ার ওয়েস্ট ক্লিপ ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নের সুযোগ পেয়েছেন।
সাইদুজ্জামান তরফদার চুনারুঘাট উপজেলার রাণীগাঁও ইউনিয়নের চাটপাড়া গ্রামের মাস্টার মরতুজ আলী তরফদার-এর পুত্র।৪ বোন ও ২ ভাইয়ের মধ্যে তিনি ৫ম।ছোট ভাই ওয়াহিদুজ্জামান তানিম চাটপাড়া ফাজিল মাদ্রাসায় ফাজিল (বিএ) ১ম বর্ষে অধ্যয়নরত।
তাঁর বাবা মাস্টার মরতুজ আলী তরফদার চুনারুঘাট সদর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বহুবছর সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত থাকার পর ২০১১ সালে অবসরপ্রাপ্ত হন।নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান সাইদুজ্জামান তরফদার তাঁর মেজো বোন সাহানারা খানম লিপি’র ঢাকার বাসায় ২০০৪ইং সালে চতুর্থ শ্রেনী থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে বিবিএ পর্যন্ত লেখাপড়া করেন।তিনি সাভার আনিস মেমোরিয়াল একাডেমি থেকে চতুর্থ শ্রেণী-ষষ্ঠ শ্রেণী,২০১১ সালে মুসলিম মডার্ণ একাডেমি থেকে ব্যবসায় শিক্ষা বিষয় নিয়ে এসএসসি,২০১৩ সালে বিএএফ শাহীন কলেজ(ঢাকা)থেকে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী,২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিভাগে বিবিএ সম্পন্ন করেন। বর্তমানে এমবিএ করার জন্য আমেরিকার আরভিন ক্যালিফোর্নিয়ার ওয়েস্ট ক্লিফ ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়ন করতে যাচ্ছেন।
সাইদুজ্জামান বলেন,আমার বাবা একজন স্কুল শিক্ষক।স্কুলের আয় দিয়ে সংসারের খরচ চালিয়ে আমাদের ৬ ভাই-বোনের লেখাপড়ার খরচ চালাতে যদিও অনেকটা হিমশিম খেতে হতো তবুও বাবা কোনদিন আমাদেরকে কোন সংকট বুঝতে দেননি।আমার বাবা শুধু একজন শ্রেষ্ট শিক্ষকই না,আমার বাবা একজন শ্রেষ্ট পিতা।এমন একজন মহান পিতার পুত্র হতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি।তিনি সকলের নিকট তাঁর বাবার সুসাস্থ্য ও দীর্ঘায়ূ কামনা করেছেন।
তিনি বলেন,নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছি।সেটাই আমাকে সবসময় তাড়া করতো।সে সময় থেকেই কিছু করার আগ্রহ আমার মনে জন্মেছিল।২০০২ সালের ১১ মে তারঁ গর্ভধারীণি ‘মা’ মৃত্যুবরণ করার পর তাঁর মেজো বোন লেখাপড়ার জন্য তাকে ঢাকায় নিয়ে যান।তাঁরপর সেখান থেকেই লেখাপড়া শুরু করেন।তিনি বলেন,মেজো বোনের স্বামী ভগ্নিপতি(দুলাভাই) মিজানুর রহমান চৌধুরী আমার আপন ফুফাত ভাই।তিনি ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এমপি ইউনিটের সার্জেন্ট।বর্তমানে তিনি অবসরে আছেন।আপা ও ভাই আমাকে প্রকৃত একজন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে অনেক শ্রম,সময়,অর্থসহ তাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন।আমি আপা ও ভগ্নিপতির (দুলাভাই) হাতেখড়ি।তাদের শাসন,ভালবাসা আর দোয়ায়-ই আজ আমি আমেরিকা গিয়ে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের সক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছি।আমি আপা ও মিজান ভাইয়ের কাছে চিরঋণী।তাঁদের ঋণ কোনদিন শোধ করতে পারবনা।কারণ,আমার বাবা গ্রামের বাড়িতে থাকলেও বড় ভাই হিসেবে মিজান ভাই সবসময় বাবার দায়িত্ব পালন করেছেন এবং এখনও করছেন।
এদিকে ছোটবেলাতেই আমার ‘মা’ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও মেজো বোনসহ আমার বড় ৪ জন বোন-ই আমাকে সোহাগ-শাসনের মধ্য দিয়ে সবসময়ই মায়ের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং এখনও করছেন।মিজান ভাই ও বোনদের এ-ঋণ যে শোধ করার নয়।আমি তাঁদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ।আমি একজন ছাত্র।আমি মনে করি পরিবার,সমাজ,দেশ ও জাতির স্বার্থে নিজেকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে আমার আরো বেশি জ্ঞান অর্জন করা প্রয়োজন।সেসব চিন্তা থেকেই আমার উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করার আগ্রহ বেড়েছে।
তিনি বলেন,আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বিএএফ শাহীন কলেজ ও তিতুমীর কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও কলেজের শিক্ষকগণের প্রতি। কারণ,তাদের উৎসাহ আমাকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।
আমি আশাবাদী আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল সহপাঠীরা আমাকে অনুসরণ করে শিক্ষার প্রতি আরো বেশি মনোযোগী হবে। শিঘ্রই আমেরিকা গমন করবেন এবং আগামী ২০ অক্টোবর ওই ইউনিভার্সিটিতে ক্লাশ শুরু হবে বলে জানান সাইদুজ্জামান তরফদার তানভীর।
Leave a Reply