ডেস্ক রিপোর্ট : এইডসের ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে সিলেট বিভাগ। সিলেট বিভাগে এইডস ঝুঁকি ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত চার জেলায় এইচআইভির সংখ্যা প্রায় ৯০০ জন। ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত নতুন করে আরও ৭০ জন এইডস রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। গর্ভাবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে এসে সনাক্ত হয়েছেন আরও ৮ জন এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত নারী।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিনিয়তই এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। যা আমাদের দেশের জন্য মোটেও সুখকর নয়। ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণ, বিদেশ ফেরত ও বাইরের জেলা থেকে সিলেটে অবস্থান এই তিন কারণেই মূলত সিলেটে এই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে, এইচআইভি ভাইরাস পরীক্ষা সহজলভ্য করলে এই রোগী চিহ্নিত করে চিকিৎসার মাধ্যমে সকলকে নিরাপদ করা যাবে এমনটা বলছেন চিকিৎসকরা।
এনজিও সংস্থা আশার আলো সোসাইটির তথ্যমতে, গেল বছরের অক্টোবর পর্যন্ত সিলেট বিভাগে এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা মোট ৮৫৪ জন। এদের মধ্যে পুরুষ রয়েছেন ৫২৭ জন, নারী ২৬৪ জন, শিশু ছেলে ৩৪ জন, শিশু মেয়ে ২৫ জন ও উভয় লিঙ্গের রয়েছেন চার জন রোগী।
এদের মধ্যে বর্তমানে জীবিত রয়েছেন পুরুষ ২৪৭ জন, নারী ২০১ জন, শিশু ছেলে ২৪ জন, শিশু মেয়ে ১৯ জন আর উভয় লিঙ্গের ৩ জন রোগী। মারা গিয়েছেন পুরুষ ২৮০ জন, নারী ৬৩ জন, শিশু ছেলে ১০ জন, শিশু মেয়ে ৬ জন ও উভয় লিঙ্গের ১ জন রোগী। চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত আরও নতুন ১৭ জন রোগী সনাক্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে পুরুষ রোগীর রয়েছেন ১১ জন ও নারী ৬ জন।
সংস্থাটির তথ্যমতে, এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার দিক দিয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলা । সিলেট জেলায় এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে পুরুষ ৩৪৫ জন, নারী ১৭২ জন, শিশু ছেলে ২১ জন, শিশু মেয়ে ৬ জন ও উভয়লিঙ্গের ২ জন। মৌলভীবাজার জেলায় পুরুষ ১০০ জন, নারী ৪৫ জন, শিশু ছেলে ৬ জন, শিশু মেয়ে ৪ জন, উভয় লিঙ্গের ২ জন। আর তৃতীয় অবস্থানে থাকা সুনামগঞ্জ জেলায় পুরুষ ৬১ জন, নারী ৩৭ জন, শিশু ছেলে ৭ জন ও শিশু মেয়ে ৩ জন। চতুর্থ অবস্থানে থাকা হবিগঞ্জে এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পুরুষ ২১ জন, নারী ১০ জন ও শিশু মেয়ে ২ জন।
আশার আলো সোসাইটির সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক আবদুর রহমান বলেন, ‘গেল বছরে এইডস রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের তথ্যমতে সাড়ে ৮শ রোগী এখন পর্যন্ত সনাক্ত হয়েছেন। তবে এটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা নয়। রোগী সনাক্তের সংখ্যা আরও বেশি রয়েছে। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও আরও নতুন রোগীর তালিকা রয়েছে। এটার সঙ্গে হাসপাতালের তালিকার সংখ্যা যোগ করলেই মূল হিসেবটা পাওয়া যাবে।’
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তথ্যমতে সিলেটে নতুন আরও ৭০ জন এইডস রোগী সনাক্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে গত এক বছরে গর্ভাবস্থায় চিকিৎসা সেবা নিতে এসে এমন রোগী সনাক্ত হয়েছেন ৮ জন। আর শেষ তিনমাসে দু’একজন বাড়তে পারে। তবে সবমিলিয়ে মোট রোগী সনাক্ত হয়েছেন ৯০০ এর একটু বেশি বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির স্ট্রেংথেনিং অব এইচআইভি সার্ভিসেস প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. মোতাহের হোসেন।
এদিকে সিলেটে এইচআইভি আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা বাড়াটা সুখকর না হলেও এটি আমাদের জন্য স্বস্তির বিষয় এমনটা বলছেন সিলেট সিভিল সার্জন ডা. হিমাংশু লাল রায়। তিনি বলেন, ‘আক্রান্ত রোগীদের সনাক্ত করা আমাদের জন্য স্বস্তির বিষয়। যদি সনাক্ত না হয় তাহলে সেই রোগী নীরবে কমিউনিটিতে রোগ ছড়াবেন। এর থেকে সনাক্তকরণ হওয়াটা আমাদের জন্য সব থেকে বেশি লাভজনক। চিকিৎসার মাধ্যমে ওই রোগীকে সকলের থেকে নিরাপদ করা যাবে। রোগীর সংখ্যাটা যদিও বাড়ছে। এদের সনাক্তকরণে আমরা বিভিন্ন উদ্যোগও গ্রহণ করছি। তবে উপজেলা পর্যায়েও যদি এই রোগ সনাক্তকরণের কাজটা করা যায় তাহলে ঝুঁকির তালিকাটা কমে আসবে।’
Leave a Reply