নুর উদ্দিন সুমন ॥ শারীরিক ও মানসিকভাবে সক্ষম এবং মেধাবীদেরকেই স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটের ১ চা শ্রমিকের কন্যাসহ ৮ জনকে কনেস্টবল হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে পুলিশ বিভাগ। মাত্র ১৩০ টাকা খরচ করে স্বপ্নপূরণ হলো চুনারুঘাটের ওই ৮ জনের। ঘুষ-তদবির ছাড়াই পুলিশের চাকরি হয়েছে তাদের। তাই মূল্যায়ন হয়েছে মেধা ও যোগ্যতার। পূরণ হয়েছে হতদরিদ্র বাবা-মা’র স্বপ্ন। ২৯ ডিসেম্বর সারদায় ট্রেনিংয়ে যোগদানের কথা রয়েছে।
এ লক্ষে শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে যোগদানপত্র গ্রহণের নিমিত্তে চুনারুঘাট থানায় আসলে ওই ৮জনকে ফুল দিয়ে বরণ করেন ও মিষ্টিমুখ করান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: আলী আশরাফ। এসময় উপস্থিত ছিলেন, থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই ভূপেন্দ্র চন্দ্র বর্মন, এসআই আব্দুল মোতালেব।
থানার ওসি এসময় তাদেরকে দায়িত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জল করার আহবান জানান। নিয়োগপ্রাপ্তরা হলেন, আমু চা বাগান এলাকার দুর্গেশ মুন্ডার মেয়ে অনামিকা মুন্ডা, নালুয়ার আড়ংবিল এলাকার জয়ন্ত সিংহর পুত্র জনি সিংহ, জোপেন মুন্ডার ছেলে বিকাশ মুন্ডা, পাইকপাড়া এলাকার আব্দুল হাইয়ের ছেলে সুফন তরফদার, দুধপাতিল আব্দুল মান্নানের ছেলে আরিফুল ইসলাম জাকিল, সাতালিয়ার মাহারাজের ছেলে মাহিম মিয়া, আলোনিয়ার মাসুদ তালুকদার শওকত ও টিলাগাঁও এলাকার নাফিজ।
দুর্গেশ মুন্ডার মেয়ে অনামিকা মুন্ডার স্বপ্ন ছিল পুলিশে চাকরি করার। কিন্তু স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবতা মিল ছিলনা। হঠাৎ একদিন জানতে পারলেন পুলিশে চাকরি পেতে কোনো টাকা-পয়সা লাগে না। আবেদন ফরম পূরণ করে লাইনে দাঁড়ালেন। সব বাছাইয়ে মেধা ও যোগ্যতা রেজাল্ট ঘোষণার পর আনন্দে আত্মহারা এ তরুণী। তিনি হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। চা বাগানে বেড়ে উঠেছেন জনি সিংহ। মাত্র ১৩০ টাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি হয়েছে তার। বাংলাদেশ পুলিশের গর্বিত সদস্য হতে পেরে আবেগ আপ্লুত জনি সিংহ। তিনি দেশের জন্য নিজের জীবনবাজি রাখবেন।
চুনারুঘাট থানা থেকে যোগদানপত্র গ্রহণের পর পুলিশ কনস্টেবল পদে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ এসব প্রার্থীরা এভাবেই নিজেদের অনুভূতির কথা জানান। এরআগে ৯ ডিসেম্বর চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করেন পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলি। এতে চুনারুঘাটের জনিসহ ৮ জন মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ১৩০টাকায় পুলিশে চাকরি পেয়েছেন। পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলি জানান, বাংলাদেশের ইতিহাসে এ পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ নজিরবিহীন ঘটনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আইজিপি মহোদয় শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে এ নিয়োগ সম্পন্ন করার জন্য কড়া নির্দেশনা দিয়েছিলেন। আমরা পেশাদারিত্ব, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। দেখা যায়, এবারের পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি প্রাপ্তদের বেশিরভাগই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তাদের কেউ দিনমজুরের সন্তান, কেউ গাড়ী চালকের আবার কেউবা এতিম। জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে কোন মতে পড়াশুনার খরচ চালিয়ে চূড়ান্ত সাফল্য অর্জন করেছে। ফলে চাকরি হওয়ায় অনেকের চোখেই ছিল আনন্দাশ্রু।
বাংলাদেশ পুলিশের গর্বিত সদস্য হতে পেরে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করবো উল্লেখ করা আরিফুর রহমান বলেন, ছোটবেলা থেকেই গল্প শুনেছি টাকা ছাড়া পুলিশে চাকরি হয়না। পুলিশ বদলে যাচ্ছে। আমরা এ বদলে যাওয়ার যুগের অগ্নিসাক্ষী। আমরা দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের জন্যই কাজ করতে চাই। পুলিশ সুপার স্যারকে ধন্যবাদ জানাই।
Leave a Reply