নুর উদ্দিন সুমন : পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরগরম হবিগঞ্জের চুনারুঘাট । জেলার ১০ টি ইউনিয়নের সবটিতেই রয়েছেন প্রায় বিদ্রোহী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপি জামায়াতের প্রার্থী। তারা ইউনিয়নগুলোতে শক্ত অবস্থানে থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ঝাঁপিয়ে পড়েছেন নিজেদের প্রার্থীকে জয়ী করতে তাদের কর্মী সমর্থকরা । চুনারুঘাটে নৌকার বিপরীতে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছেন দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরাই। আগামী ৫ জানুয়ারি এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আচরণ বিধি ও আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে চুনারুঘাটে অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সকল প্রার্থীরা উপস্থিত থেকে তাদের সমস্যা তুলে ধরে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবী জানান। একই সাথে প্রার্থীরা প্রচারণায় বাঁধা, হামলা,সমর্থকদের মারধরের অভিযোগ তুলে ধরেন। এসময় কর্মকর্তারা নিরাপত্তা দেয়াসহ সুষ্ঠ নির্বাচনের আশ্বাস প্রদান করেন। মঙ্গলবার বিকেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা এনামুল হক মোস্তফা শহীদ অডিটোরিয়াম মাঠে এই বিশেষ আইনশৃঙ্খলা ও অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ ভৌমিক এর সভাপতিত্বে এতে নির্বাচনে প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলী। এতে অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন জেলা নির্বাচন অফিসার মো: সাদিকুল ইসলাম, মাধবপুর সার্কেল মহসিন আল মুরাদ, অফিসার ইনচার্জ মো: আলী আশরাফ, উপজেলা নির্বাচন অফিসার দিপক কুমার রায়, উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদ রানা, উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা বারেন্দ্র রায়, কৃষি কর্মকর্তা মাহিদুল ইসলাম ও মৎস্য কর্মকর্তা। এসময় ১ নং গাজীপুর ইউনিয়নের বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী মোহাম্মদ আলী, ৮নং সাটিয়াজুরী ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুর রশিদ মাষ্টার,৬ নং সদর ইউনিয়নের নৌকার মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এডভোকেট কুতুব উদ্দিন,৩ নং দেওরগাছ ইউনিয়নের নৌকার মনোনীত প্রার্থী আলহাজ্ব শামছুন্নাহার চৌধুরী সহ বেশ কয়েকজন সাধারণ সদস্য প্রার্থী তাদের প্রচারণায় বাঁধা দেয়ার আভিয়োগ তুলে ধরে সুষ্ঠ নির্বাচন ও প্রচার-প্রচারনা চালানোর জন্য প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করেন। সকল প্রার্থীদের অভিযোগ শুনে প্রশাসনের কর্মকর্তারা নির্ভয়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার কথা ব্যক্ত করে তাদের সকল ধরনের নিরাপত্তা প্রদানের প্রতিশ্রতি দেয়া হয় । একই সাথে মাইক ব্যবহার ও বাঁশি বাজিয়ে শব্দ দূষণ না করতে সতর্ক করা হয় এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। কিন্তু কেউ বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে তাকে ছাড় দেয়া হবে না বলে হুশিয়ারী দেন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার । এসময় উপস্থিত উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীগণ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে প্রার্থীগণ এখন নির্ঘুম রাত কাটিয়ে ভোটারের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, প্রার্থীদের প্রচার ততই বাড়ছে। অনেক প্রার্থী ভোট নেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। আবার দলীয় নেতাকর্মীরা এলাকার মহল্লায় গিয়ে ছোটখাটো পথসভা করে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদের প্রতি অনুরোধ করছেন।
এখন সাধারণ ভোটাররা প্রার্থীদের নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। তবে অধিকাংশ ভোটার দলের চেয়ে বরং তাদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকবেন, তাকেই ভোট দেবেন বলে পাড়া মহল্লায় ও চায়ের দোকানে আলাপ আলোচনা চলছে।
পাড়া-মহল্লার প্রতিটি চায়ের দোকানে চলছে নির্বাচন নিয়ে নানা বিশ্লেষণ। মূলত কোন প্রার্থী এলাকার উন্নয়নে কাজে আসবেন, এমন বিশ্লেষণে সরগরম চায়ের দোকানগুলো। নির্বাচনী এলাকায় চলে মোটরসাইকেল শোডাউন, মিছিল-মিটিং।
১০ ইউনিয়নে ৬২৩ জন প্রার্থী প্রতীক নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। যদিও দলীয় প্রার্থীদের প্রতীক আগে থেকেই চুড়ান্ত ছিল। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে ৪ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এরমধ্যে ২ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী, দুইজন সাধারণ সদস্য প্রার্থী। প্রত্যাহার শেষে ১০ ইউনিয়নে প্রার্থীর সংখ্যা চেয়ারম্যান ৪৮ ও সাধারণ ওয়ার্ডের ৪১৪ ও সংরক্ষিত আসনে ১৬১ জন দাঁড়াল। এ তথ্য নিশ্চিত করেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দীপক কুমার রায়। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. সাদেকুল ইসলাম জানান, ৫ জানুয়ারী ৫ ম ধাপের নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। তিনি একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন।
Leave a Reply