তথ্য গোপন করে এবং এক মাদক ব্যবসায়ীকে বেশী কারাবাস দেখিয়ে জামিন করানোর অভিযোগে হবিগঞ্জ জেলা বারে কুতুব উদ্দিন জুয়েল নামে এক আইনজীবী আজীবনের জন্য বহিষ্কার হয়েছেন। বুধবার (৩০ জুন) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা বারের সভাপতি আবুল মনসুর। তিনি জানান, হবিগঞ্জ জেলা বারের সিদ্ধান্তে এই আইনজীবী আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে । আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ মে তথ্য জালিয়াতি করে আদালতকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে দুই মাদকবারীকে জামিনে মুক্ত করেন এডভোকেট কুতুব উদ্দিন জুয়েল। গত ৮ এপ্রিল মাধবপুর উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জগদীশপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্তর এলাকা থেকে ৫০ বোতল ফেন্সিডিলসহ দুই মাদক কারবারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত মাদককারবারী নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁ থানার গোয়ালদী গ্রামের হাবিবুর রহমান ভূইয়ার ছেলে মামুন ভূইয়া (৩৭) ও নরসিংদীর মাধবদী থানার মৃত নুর হোসেন এর ছেলে নবীর হোসেন (৩২) এর বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা দায়েরের পর আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। পরে তাদের আইনজীবী হিসাবে এডভোকেট মিজানুর রহমান বিভিন্ন সময় আদালতে জামিন প্রার্থনা করেন। কিন্তু গত ২৩ মে আসামীদের স্বজনরা এডভোকেট মিজানুর রহমান এর কাছ থেকে মামলাটি নিয়ে কুতুব উদ্দিন জুয়েল নামে অন্য একজন আইনজীবীর সাথে চুক্তি করেন দ্রুত জামিন করানোর শর্তে। এর পর ১২ মে ৯৪৪/২১ মিস কেইস এর মাধ্যমে জাকির হোসেন এর জামিনের আবেদনে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয় ৭ জানুয়ারী । অথচ ওই আসামী গ্রেফতার হয় ৭ মার্চ। পরে তথ্য জালিয়াতির মাধ্যমে হবিগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ নাসিম রেজার আদালত থেকে গত ২৭ মে দুই আসামীর জামিন হয়। দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদনে বলা হয় আসামীরা ৯ ফেব্রুয়ারী থেকে জেল হাজতে আছে। অথচ ওই তারিখের অনেক পরে এই ঘটনা ঘটে। আবার দায়রা জজ আদালতে নিম্ন আদালতের ১২ মে তারিখের আদেশের বিপরীতে জামিন প্রার্থনা করলেও ওই দিন নিম্ন আদালতে জামিন প্রার্থনা করা হয়েছিল একজনের। কিন্তু জালিয়াতির মাধ্যমে দুইজনের জামিন করেন কুতুব উদ্দিন জুয়েল। পরে বিষয়টি আদালতের নজরে আসলে ভারপ্রাপ্ত দায়রা জজ গত ২ জুন এক আদেশে নবীর হোসেন জামিন বাতিল করেন। একই সাথে এডভোকেট কুতুব উদ্দিন জুয়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা এডভোকেট সমিতির সংশ্লিষ্টদের বলা হয়। সমিতি তার অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে হবিগঞ্জ জেলা বার থেকে বহিষ্কার করেন। এ বিষয়ে আসামীদের প্রথম আইনজীবী মিজানুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘গত ১২ মে শুধুমাত্র আসামী মামুন ভূইয়ার জামিন প্রার্থনা করি আমি। এ সময় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পবন চন্দ্র বর্মন তা না’মঞ্জুর করেন। গত ২৩ মে আসামীদের স্বজনরা আমার কাছ থেকে মামলাটি এডভোকেট কুতুব উদ্দিন জুয়েলের কাছে হস্তান্তর করেন। পরে ২৭ মে ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মিস কেইস শুনানির মাধ্যমে আসামীদের জামিন মঞ্জুর করানো হয়। তিনি আরো বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ১২ মে তারিখের না’মঞ্জুরের নকল দিয়েই না-কি মিস কেইস করা হয়েছে। কিন্তু ১২ মে আমি শুধুমাত্র একজনের জামিন প্রার্থনা করেছিলাম। দুইজনের জন্য সেই নকল দিয়ে মিস কেইস করার কোন সুযোগ থাকার কথা নয়। এখানে স্পষ্ট জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে।
Leave a Reply