করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশে অনেকের আয় কমেছে। এমন প্রেক্ষাপটে গত তিন মাস ধরে অতিরিক্ত বিদ্যুত্ বিল নিয়ে বিপাকে পড়েছে জনগণ। সব বিল সমন্বয় করা হয়েছে বলে সরকারের পক্ষে দাবি করা হলেও চলতি জুলাই মাসেও অতিরিক্ত বিদ্যুত্ বিল পেয়েছেন গ্রাহক। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সরকার নির্ধারিত বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি।
গত মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর নাগরিক জীবন বন্দি, সীমিত ও দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। চাকরি নেই অনেক শ্রমিকের। আয় বন্ধ বা কমার এ প্রবণতার সময় গত এপ্রিল মাস থেকে বিদ্যুতের বর্ধিত দামের বিল হাতে পাচ্ছেন গ্রাহকরা। গত মার্চ থেকে কার্যকর হওয়া ওই মূল্যহার অনুযায়ী, সাধারণ খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম গড়ে ৩৬ পয়সা বা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি ইউনিটের দাম ৬ টাকা ৭৭ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭ টাকা ১৩ পয়সা। সংকটের সময় বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে সব শ্রেণির গ্রাহককে।
গত এপ্রিল ও মে মাসে দেশে সব মিলিয়ে ৬২ হাজার বিদ্যুত্ বিলে অসঙ্গতি পাওয়া গেছে বলে সরকারের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। কিন্তু এমন অসঙ্গতিপূর্ণ বিলের সংখ্যা আরো বেশি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সব বিল বাতিল করে নতুনভাবে যাচাই করলে সব গ্রাহক সঠিক বিল পেতে পারতেন বলে মনে করেন ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম।
অতিরিক্ত বিদ্যুত্ বিল নিয়ে দেশ জুড়ে ভোগান্তি দেখা দেওয়ার পর বিদ্যুত্ বিভাগ একটি টাস্কফোর্স গঠন করে। টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই সময়কালে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ২ কোটি ৯০ লাখ গ্রাহকের মধ্যে ৩৪ হাজার ৬১১ জনের অতিরিক্ত বিল করা হয়েছে। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ৯ লাখ ২৬ হাজার ৬৮৯ জন গ্রাহকের মধ্যে ১৫ হাজার ২৬৬ জন, ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ১০ লাখ গ্রাহকের মধ্যে ৫ হাজার ৬৫৭ জন, নর্দান ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) ১৫ লাখ ৪৮ হাজার গ্রাহকের মধ্যে ২ হাজার ৫২৪ জন, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিক্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ১২ লাখ ১৩ হাজার গ্রাহকের মধ্যে ৫৫৬ জন, বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ৩২ লাখ ১৮ হাজার ৫১৫ জনের মধ্যে ২ হাজার ৫৮২ জন অতিরিক্ত বিলের শিকার হয়েছেন।
এ বিদ্যুত্ বিলের পেছনে ২৯০ জনকে চিহ্নিত করে টাস্কফোর্স। এদের মধ্যে কয়েক জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে।
কিন্তু চলতি মাসে পাওয়া জুনের বিলেও আগের বিল সমন্বয় করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন কয়েক জন গ্রাহক। একই সঙ্গে বিদ্যুতের বিলও বেশি এসেছে বলে মনে করেন তারা। রাজধানীর রামপুরার একটি বাসার মাসিক বিল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের বিদ্যুত্ বিল ছিল ২ হাজার ২৪১ টাকা। এরপর এপ্রিল, মে ও জুন মাসে তাদের বিল এসেছে ৪ হাজার ১১০, ১ হাজার ৯২৩ ও ৫ হাজার ৯৫৬ টাকা। বেসরকারি চাকরিজীবী কাওসার আহমেদ (ছদ্মনাম) বিদ্যুত্ বিল বাবদ তার খরচ বৃদ্ধি দ্বিগুণ হয়ে গেছে বলে জানান। গত ফেব্রুয়ারিতে তার বাসার বিদ্যুত্ বিল ছিল ১ হাজার ২১৩ টাকা। জুনে সেটি হয়েছে ২ হাজার ৪৯১ টাকা।
বিদ্যুতের বিল আগের চেয়ে বেশি আসার কারণগুলো সম্পর্কে ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) শাহিদ সারওয়ার বলেন, মিটার রিডিং না নিলে বা নিতে ভুল করলে ভুতুড়ে বিল তৈরি হয়। আর মিটার নষ্ট হয়ে গেলে এবং করোনার কারণে মানুষের বাসাবাড়িতে থাকার সময় বেড়ে যাওয়ায় আবাসিক খাতে বিদ্যুতের বিল বেড়ে যেতে পারে।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান বলেন, ডিপিডিসির অধীনে সব গ্রাহকের বিল ঠিক করেছি। যেগুলো দরকার সেগুলো সমন্বয় করা হয়েছে। এর পরও সাড়ে ১৩ লাখ গ্রাহকের মধ্যে কয়েক জনের বিল ভুল হতে পারে। তারা হটলাইনে বা স্থানীয় বিদ্যুত্ অফিসে গিয়ে সেটি ঠিক করে নিতে পারবেন।
Leave a Reply