অবশেষে ধরা পড়েছেন করোনা পরীক্ষা কেলেঙ্কারির মূলহোতা রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান প্রতারক মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম। গতকাল বুধবার ভোরে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরা সীমান্ত এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব। এক সপ্তাহ আগে উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের পর সাহেদের নানা প্রতারণার কথা সামনে আসে। তার বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক মামলাও রয়েছে। অত্যন্ত ধুরন্ধর এই প্রতারক প্রায়ই টিভি টকশোতে উপস্থিত হয়ে দেশবাসীকে জ্ঞান দিতেন। নিজেকে আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সদস্য বলেও পরিচয় দিতেন।
র্যাব বলছে, সাহেদের মদতদাতাদের এখন খোঁজা হচ্ছে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
র্যাব জানায়, সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার সীমান্তবর্তী কোমরপুর গ্রামের লবঙ্গবতী নদীর তীর থেকে ভোর সোয়া ৫টার দিকে তাকে গ্রেফতারের সময় তার কাছে গুলিসহ একটি ‘অবৈধ অস্ত্র’ পাওয়া যায়। এরপর তাকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হয়। র্যাব সদর দপ্তরে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই তাকে নিয়ে উত্তরার একটি বাড়িতে অভিযান চালায় র্যাব। সেখানে জাল টাকার সন্ধান মেলে। বিকালে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করে গ্রেফতার অভিযানের আদ্যোপান্ত বলেন র্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। ব্রিফিং শেষে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে চেকআপের পর সাহেদকে ডিবির কাছে হস্তান্তর করে র্যাব।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন সাহেদ
ক্ষমতাসীন দলের নেতা পরিচয় দিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নানা কাজ হাসিল করে নেওয়া এই সাহেদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে র্যাব। র্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, রিজেন্ট হাসপাতালের কর্ণধার সাহেদ করিম নিজেকে যতই ক্লিন ইমেজের ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করুক না কেন, তিনি মূলত চতুর, ধুরন্ধর, অর্থলিপ্সু একজন মানুষ। র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাহেদ দাবি করেছেন, তাকে সর্বোচ্চ ছয় মাস আটকে রাখা যাবে। তবে তিনি আক্ষেপ করে বলেছেন, এত মানুষকে এত দিন টাকা দিয়েছেন, কিন্তু বিপদে পড়ার পর কেউ তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। কাদের মদতে সাহেদ এত বড় প্রতারক হয়ে উঠেছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনবে র্যাব।
বোরকা পরে পালানোর চেষ্টা
ব্রিফিংয়ে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, মামলা হওয়ার পরপরই সাহেদ এক জেলা থেকে অন্য জেলায় আত্মগোপনের চেষ্টা চালান। ঢাকা থেকে তিনি কুমিল্লা, কক্সবাজার ও সাতক্ষীরায় গিয়েছেন। গত সাত-আট দিনের মধ্যে সাহেদ একাধিকবার ঢাকায়ও এসেছেন। কখনো নিজস্ব গাড়িতে যাতায়াত করেছেন, কখনো ভাড়া গাড়ি, কখনো ট্রাকে আবার কখনো হেঁটেও যাতায়াত করেছেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রিজেন্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ পারভেজকে গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সম্ভাব্য কোন কোন পথে দেশ ছাড়তে পারেন সাহেদ, সে সম্পর্কে র্যাবকে ধারণা দেন। এরপর বুড়িমারী, সাপাহার ও সাতক্ষীরার সীমান্ত এলাকায় র্যাব নজরদারি বাড়ায়। একপর্যায়ে সাতক্ষীরার সীমান্ত এলাকার কোমরপুর বেইলি ব্রিজের পাশে নর্দমার মধ্যে থেকে বোরকা পরা অবস্থায় সাহেদকে গ্রেফতার করে র্যাব।
গোপন আস্তানায় অভিযান
গত ৬ ও ৭ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায় র্যাব। এর পরই সাহেদ লাপাত্তা হয়ে যান। গতকাল সাহেদ গ্রেফতারের পর উত্তরায় তার এক গোপন আস্তানায় অভিযান চালায় র্যাব। সেখানে এক লাখ ৪৬ হাজার জাল টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে বিকালে তাকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। সামান্য বুকে ব্যথা অনুভব করায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে সেখানে তাকে বিচলিত দেখা যায়নি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তরা বিভাগ) উপ-কমিশনার মো. শফিকুল আলম বলেন, মঙ্গলবার সাহেদের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় করা মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়। পঞ্চাশটির অধিক মামলা আছে সাহেদের বিরুদ্ধে। আজ বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করা হবে।
র্যাব অফিসে ভুক্তভোগীদের ভিড় :সাহেদকে গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়লে অনেক ভুক্তভোগী র্যাব অফিসে ভিড় করেন। তারা জানান, কীভাবে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন সাহেদ। এসব ভুক্তভোগীকে সহায়তা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন র্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেছেন, ‘ভুক্তভোগী যারা আমাদের কাছে আসছেন আমরা তাদের আইনানুগ পরামর্শ দিচ্ছি।’
Leave a Reply