নিউজ ডেস্ক।। বাড়িতে চলছিল বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। আত্মীয়-স্বজনে ভরা বাড়িতে চলছিল আনন্দ উল্লাস। বিকেলে স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়িতে আসার কথা ছিল সদ্য বিবাহিত পিংকি রায়ের। তাদের অপেক্ষায় ছিলেন বাড়ির সবাই। কিন্তু সেই আনন্দঘন মুহূর্ত এক নিমিষেই বিষাদে পরিণত হলো। আগুনে পুড়ে মারা গেল পিংকির বাবা-বোন-কাকিসহ তার দুই আত্মীয়।
মঙ্গলবার(২৮ জানুয়ারী) সকাল সোয়া ১০টার দিকে মৌলভীবাজার শহরের সেন্ট্রাল রোডে ঘটে মর্মান্তিক এই ঘটনা। পিংকি সু স্টোর নামে একটি জুতার দোকান থেকে লাগা আগুনে ওই বাড়িতে থাকা পাঁচজনই পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়।
নিহতরা হলেন- পিংকির বাবা ও জুতার দোকানটির মালিক সুভাষ রায় (৬৫), পিংকির ছোট বোন প্রিয়া রায় (১৯), কাকি দীপ্তি রায় (৪৮),হবিগঞ্জ শহরতলীর উমেদনগরের মাসি দিপা রায় (৩৫) ও দিপার মেয়ে বৈশাখী রায় (৩)। এ ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ আরও দু’জনকে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় শহরজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পিংকি স্টোরের পেছনে দোকান মালিক স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে থাকতেন। গত সপ্তাহে এই বাড়িতে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থাকায় অনেক অতিথি ছিলেন। দোতলা ভবনের ওপরের তলায় বাসা ও নিচে জুতার দোকান। সকালে প্রথমে দোতলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুন পরে জুতোর দোকানসহ আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। অতিথিসহ ওই পরিবারের কয়েকজন পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে যেতে পারলেও ঘরে আটকা পড়েন পাঁচজন। খবর পেয়ে মৌলভীবাজার ও শ্রীমঙ্গল ফায়ার সার্ভিসের দু’টি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। দেড় ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর দোতলার বাসা থেকে পাঁচজনের দগ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন, পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তানিয়া সুলতানাকে প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান নাজিয়া শিরিন। তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে এক লাখ টাকা প্রদান করা হয়। পৌর কাউন্সিলর জালাল আহমদকে প্রধান করে পৌরসভা থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মৌলভীবাজার ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ হারুন পাশা আগুনে পুড়ে শিশুসহ পাঁচজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পিংকি সু স্টোর ও লাগোয়া ওপর-নিচের বাসা পুড়ে পুরোপুরি ছাই হয়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ চলছে। মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি আলমগীর হোসেন জানান, মৃতদেহগুলো উদ্ধার করে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
প্রতিবেশীরা জানান, গত ২২ জানুয়ারি ছিল সুভাষ রায়ের মেয়ে পিংকির বিয়ের অনুষ্ঠান। সোমবার সদ্য বিবাহিত পিংকি রায়ের চতুর্থ মঙ্গলানুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।মঙ্গলবার বিকেলে বরকে নিয়ে বাবার বাসায় আসার কথা ছিল পিংকির। আর এদিন সকালেই ঘটে গেল মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা। নিহত সুভাস রায়ের ভাই প্রণয় রায় অগ্নিকাণ্ড থেকে বেঁচে গেলেও স্বজন হারানোর শোকে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে স্থানীয় লাইফ লাইন হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তারা আরও জানান, অগ্নিকাণ্ডের সময় পিংকি সু স্টোরের কর্মচারীসহ ১৪ জন ওই বাসায় ছিলেন। পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া ৯ জনের জীবন রক্ষা পেয়েছে। সামনের দরজা দিয়ে বেরুতে যাওয়া পাঁচজন মারা গেছেন বলে তারা ধারণা করছেন।
মৌলভীবাজার শহরের ব্যবসায়ী সুমেস দাস যীশু বলেন, সুভাস রায় একজন শান্ত স্বভাবের মানুষ ছিলেন। তার পরিবারের সদস্যসহ পাঁচ স্বজন মারা যাওয়ায় গভীরভাবে শোকাহত তিনি। বিকেল ৫টার দিকে শহরের সৈয়ারপুর শ্মশানঘাটে পাঁচজনের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় ওই এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
Leave a Reply