স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে ঢাকার মিরপুর মডেল থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ঢাকার মিরপুর যুবদল নেতা ও মিরপুরের বাঙ্গালিয়ানা ভোজের সহকারি বাবুর্চি হৃদয় মিয়াকে হত্যা চেষ্টা মামলায় সোমবার (২১ অক্টোবর) দিনগত মধ্যরাতে ব্যারিস্টার সুমনকে গ্রেফতার করা হয়। মিরপুর-৬ নম্বরে তার বোনের বাসা থেকে মিরপুর মডেল থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পরে আদালত তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। মিরপুর থানার ওসি বলেন, মিরপুর থানায় দায়ের হত্যা মামলায় সায়েদুল হক সুমনকে সোমবার মধ্যরাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে মিরপুর থানা কম্পাউন্ডে সংস্কার কাজ চলায় ওই আসামিকে পল্লবী থানায় রাখা হয়। মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করা হবে। ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন রাত ১টা ২১ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও বার্তায় লিখেছেন, আমি পুলিশের সাথে যাচ্ছি। দেখা হবে আদালতে। দোয়া করবেন সবাই। ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, প্রথমেই জানাতে চাই আমি দেশেই রয়েছি। ঢাকা শহরেই আছি। ৫ আগস্টের পর আমি কোথাও যাইনি। শুধুমাত্র নিরাপত্তার কারণে আমি গোপনে ছিলাম। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর অনেকেই আমাকে বলেছেন যে তুমি বিদেশে চলে যাও। কিন্তু আমি যাইনি। আমার কাছে মনে হয়েছে যে, আমি কোনো দিন দুর্নীতি করিনি। ঢাকা শহরে আমার কোনো প্লট নাই ও ফ্লাট নেই। আমার গাড়ি ছাড়া আমার কোন সম্পদ নাই। তারপরও আমি কোন অপরাধ করি নাই, কেন কেন আমি দেশ ছেড়ে যাব। আমার নামে যদি কোনো মামলা হয়ে থাকে তাহলে তা আইনের মাধ্যমে মোকাবিলা করব। যেহেতু আমি আইনজীবী, আইনের প্রতি আমার বিশ্বাস রয়েছে। আমি আমার হালাল রোজগার দিয়ে অনেক সম্পদ করার সুযোগ ছিল। কিন্তু পুরো টাকাটা আমার চুনারুঘাট-মাধবপুরের জনগণসহ বিভিন্ন দুর্যোগে চেষ্টা করেছি মানুষের কল্যাণে দাড়ানো। তিনি বলেন, সংস্কারের যে কার্যক্রম এ কার্যক্রমে আমি এমন সব মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলাম যাদের বিরুদ্ধে এখন মামলা চলছে। তার অংশ হিসেবে আমি এমন সব মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলাম। এগুলো প্রথমে আমিই শুরু করেছিলাম। আমি মনে করি, দেশের কল্যাণে কাজ করে যেতে হবে, এতে ক্রেডিট নেয়ার কিছু নেই। সংস্কারের জন্য যদি আবারো কাজ করার সুযোগ থাবে তবে আবারো আমি কাজ করবো। সুমন বিগত কয়েক বছর ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি আর অসঙ্গতি তুলে ধরে আলোচনায় এসেছিলেন। এক সময়ে কেন্দ্রীয় যুবলীগে পদ পেলেও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে থানার ওসির দলীয় শ্লোগান দেওয়ার সমালোচনা করে পদ হারান তিনি। গতকাল মঙ্গলবার তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠুতদন্তের জন্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুল হালিম। অপর দিকে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইন তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই ঢাকার মিরপুর যুবদল নেতা ও মিরপুরের বাঙ্গালিয়ানা ভোজের সহকারি বাবুর্চি হৃদয় মিয়া জুমার নামাজ শেষে মিরপুর-১০ নম্বরে সমাবেশে যান। সেখানে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হন হৃদয়। তিনি হবিগঞ্জের মাধবপুর ১০নং ছাতিয়াইন ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি। এ ঘটনায় তিনি ২৩ সেপ্টেম্বর মিরপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার ৩ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি ব্যারিস্টার সুমন।
Leave a Reply