শাহ মোহাম্মদ দুলাল আহমেদ,বাহুবল (হবিগঞ্জ)থেকেঃ বাহুবলে করাঙ্গী নদীতে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ অবধারিত ভাবে বহমান, এর ফলে প্রায় লক্ষাধিক জনসাধারনের দূর্ভোগ চরমে।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, আজ (১৬ মে) সকাল থেকেই নদীর সকল স্পটে বিভিন্ন জাতের মাছ ভাসমান(মৃত) অবস্থায় দেখা যায়। নদীতে মাছ ধরার জন্য নামেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় কয়েকজনকে মাছ মারা যাওয়া কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে,
উত্তরে আসে,এগুলো বড়গাও এ অবস্থিত কয়েকটা কোম্পানীর বিষাক্ত রাসায়নিক বজ্র প্রতিনিয়ত বহমান হয় এই করাঙ্গী নদীতে,ফলে নদীর সকল ধরনের মাছ মরে যাচ্ছে, এমনকি পানি ব্যবহার থেকে বিরত থাকেন বলে জানান স্থানীয় লোকজন।
বিষাক্ত বজ্র, নদীর পানি বিষের ন্যায় রুপান্তর হওয়ায় বাহুবলের প্রাণবন্ধ এই করাঙ্গী নদীকে পরিত্যাগ্ধ হিসেবে মনে করে আসছেন বাহুবলের লোক সাধারন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাহুবলের একমাত্র নদী,যে নদীটি প্রায় হাজার বছর বছর পূর্বে থেকে পরিচিত।
নদীটি ভারতের আসাম রাজ্য থেকে সূত্রপাত হলে ও বাহুবলের ৭ নং ভাদেশ্বর ইউ/পি এবং ৪নং বাহুবল সদর,৩ নং সাতকাপন ইউনিয়নের মধ্যবর্তী গ্রামের কোল ঘেষে বয়ে গেছে।
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের ছোয়ার মায়াবি স্পন্দন বাহুবলের করাঙ্গী নদী।
স্থানীয়দের তথ্য মতে জানা যায়,করাঙ্গী নদীর মাছ বাহুবল,হবিগঞ্জ নয়,তথা বৃহত্তর সিলেটে ও সমাদৃত।
এ নদীর মাছ খেতে ভারী স্বাদ এবং মজা।
প্রায় একবছর যাবত নদীতে বিষাক্ত রাসায়নিক বজ্র ফেলায়,নদীর পানি কালো হয়ে গেছে,পানি বিষাক্ত,ফলে অতিথিতের তুলনায় আর বেশ মাছ পাওয়া যায় না।
স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ,আমাদের করাঙ্গী নদীর পানি বিষাক্তের ফলের আমরা জীবিকা নির্বাহে পরেছি খুব কষ্টে এবং দূর্বিসহে।
জীবিকা নির্বাহে করাঙ্গী নদীকে জেলেদের প্রধান কর্মস্থলের একমাত্র মাধ্যম করছিলেন স্থানীয় জেলেরা।
প্রতিবেদকের সাথে কথা বলেন স্থানীয়
কয়েকজন জেলে,তাঁরা জানান, মাঝে মধ্যে মৃত মাছ ধরেও প্রতিদিন তা ছেড়ে দেন।
কোন মাছ’ই খাওয়ার উপযোগী নয় বলে তাঁরা জানান। অভিযোগ করে বলেন
মাছে নাকি কেরোসিনের গন্ধ।
মৎস প্রজনন মৌসুমে একেই অবস্থা।যে সময়ে নদীতে মাছের পোনা জন্মায় ঠিক সে সময়েই নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে কালো হয়ে যায়।
যার জন্য নতুন পোনা জন্মাতে অসীম ব্যাঘাত ঘটায়।
যার জন্যে নদীতে আর আগের মত বাহুবলের দেশীয় মাছ পাওয়া যায় না।
একসময়ের প্রবল খড়স্রোতা করাঙ্গী নদী এখন প্রতিনিয়ত দূষনের শিকার হচ্ছে।
নদীর পানিতে আর আগের মতো বেগও নেই।
থেমে থেমে প্রবাহিত হচ্ছে নদী।
নদীর পানির রং একদম কালচে, সেখানে বিষাক্ত গ্যাসের অর্বুধ
কোম্পানীর বর্জ্য এসে মিশে নদীর পানিকে করে তুলেছে বিষাক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত।
নদীতে থাকা মাছ ও জলজ প্রানী মরা, আধমরা হয়ে ভেসে উঠছে প্রতিদিন।
এতে করে জীববৈচিত্র পড়ছে হুমকির মূখে।
নদীটির দুই পাড়ে রয়েছে হাজার হাজার মানুষের বসবাস।
তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই নদীটির উপর’ই নির্ভর,
তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী এই নদী,
গোসল করা,জীবিকা নির্বাহ, যাতায়াত ব্যবস্থা ও গড়ে উঠেছে এই নদীটিকে কেন্দ্র করে।
কিন্তু বর্তমানে এই নদীর পানি এতটাই খারাপ হয়েছে যে, ঘ্রান নেয়াই সম্ভব হচ্ছে না।
টলটলে, জলজলে পানির পরিবর্তে কালো ময়লাযুক্ত পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
নদীর পাড়ে থাকা মানুষ এই পানিতে গোসল করে নানা রকমের জঠিল রোগের কবলে পড়ছে।
পরিবেশ দুষন হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
মাছের প্রজনন রোধসহ নানা ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে আবহমানকাল থেকে বয়ে যাওয়া এই নদীটি।
নদী মারা যাওয়ার কারণে নগরী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার উদাহরণ অনেক আছে
আমাদের জন্মভূমি বাহুবল কোম্পানীর আগ্রাসনে ধ্বংস হয়ে যাক, তা আমরা কেউ’ই চাইবো না।
আমাদের প্রাণ-স্পন্দন করাঙ্গী নদীটিকে দূষনের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য বাহুবল উপজেলা প্রশাসন,সচেতন মহল সহ উপজেলার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করছেন অবহেলিত বাহুবলের সর্বসাধারণ।
উল্লেখ্যঃ ‘পার্লামেন্ট অব বাহুবল’পাবলিক ফেইজবুক গ্রপে,বাহুবলের ঐতিহ্যবাহী করাঙ্গী নদীর বেঁহাল দশা তুলে ধরেন এই গ্রুপের এডমিন শুভ্রদেব অভি।তাঁর করা ফেইজবুক পোষ্টে ব্যাপক সাড়া পেয়েছে।
Leave a Reply