প্রথম সেবা ডেস্ক : আজ মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে হবিগঞ্জ জেলার তেলিয়াপাড়া চা বাগানে শুরু হয় মুক্তিবাহিনীর কার্যক্রম। এ বছর দিনটি আনুষ্ঠানিকভাবে পালনের জন্য হবিগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ড ও মাধবপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের যৌথ উদ্যোগে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ হবিগঞ্জ জেলা ইউনিট কমান্ডার এডভোকেট মোহাম্মদ আলী পাঠান জানান, তেলিয়াপাড়া চা বাগানে নির্মিত স্মৃতিসৌধ এলাকায় মঙ্গলবার বেলা ১০টায় মুক্তিযোদ্ধা ও জনতার উপস্থিতিতে দিনব্যাপী মিলনমেলা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে স্মৃতিচারণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। মিলনমেলা সফল করার লক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। মিলনমেলায় উপস্থিত থাকার জন্য ৭১ এর সেক্টর কমান্ডার, সাব সেক্টর কমান্ডার, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এপ্রিল মাসে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া চা বাগানে স্থাপিত হয় মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তর। সড়ক ও রেলপথে বৃহত্তর সিলেটে প্রবেশের ক্ষেত্রে মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়ার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। ৪ এপ্রিল ২য় ও ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসারদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কর্ণেল মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ম্যানেজার বাংলোতে এক গুরুত্বপূর্ণ সভায় মিলিত হন। সভায় প্রাথমিকভাবে সারা দেশকে ৪টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়, যা পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের কৌশলগত পরিচালনায় ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
তেলিয়াপাড়ায় মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণকালে উপস্থিত ছিলেন লেঃ কর্ণেল এম এ রব, মেজর শফিউল্লাহ, মেজর জিয়াউর রহমান, মেজর খালেদ মোশাররফ, লেঃ কর্ণেল সালাউদ্দিন রেজা, মেজর কাজী নুরুজ্জামান, মেজর মঈনুল হোসেন চৌধুরী, মেজর নুরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন নাসিম, ক্যাপ্টেন মতিনসহ জনপ্রতিনিধিবৃন্দ। ৪ এপ্রিলের সভায় কর্ণেল ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক ও লেঃ কর্ণেল এম এ রবকে উপ-সর্বাধিনায়ক নিয়োগ করা হয়। ৩নং সেক্টরের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন মেজর শফিউল্লাহ। হবিগঞ্জ ৩নং সেক্টরের অর্ন্তভুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় তেলিয়াপাড়া ম্যানেজার বাংলোসহ পাশ্ববর্তী এলাকা ছিল মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সেনানায়কদের পদচারনায় মুখরিত ছিল। ১৯৭১ সালের ২১ জুনের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রচন্ড আক্রমনের কারণে তেলিয়াপাড়া চা বাগানে স্থাপিত মুক্তিবাহিনীর সেক্টর হেড কোয়ার্টার প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
স্বাধীনতা পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে ধারণ করে তেলিয়াপাড়া চা বাগানে ম্যানেজার বাংলোর পাশে নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যে ঘেরা স্থানে নির্মিত হয়েছে বুলেট আকৃতির স্মৃতিসৌধ। স্মৃতিসৌধের ফলকে ৩৩ জনের নামের তালিকায় রয়েছে রাজনৈতিক নেতা, সাবেক সেনা ও সরকারী কর্মকর্তা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নাম। এর মধ্যে রয়েছে প্রথম সেনাপ্রধান কর্ণেল আতাউল গণি ওসমানী, সহ-সেনাপ্রধান লেঃ কর্ণেল আব্দুর রব এমএনএ, মেজর কে এম সফিউল্লাহ (সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়া), মেজর খালেদ মোশাররফ (কুমিল্লা-নোয়াখালি), মেজর জিয়াউর রহমান (চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রাম) ও মেজর আবু ওসমান চৌধুরীর (কুষ্টিয়া-যশোহর পশ্চিম রনাঙ্গন) নাম। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা তেলিয়াপাড়া চা বাগান এলাকায় অবস্থিত এই ব্যতিক্রমধর্মী স্মৃতিসৌধ দেখার জন্য প্রতিদিন ভীড় জমান।
Leave a Reply