ডেস্ক রিপোর্ট: আজ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯। বিকেল ৩ টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মেলার উদ্বোধন করবেন। এসময় বাংলা সাহিত্যে অবদান রাখার জন্য ৪জন বিশিষ্ট্য ব্যক্তিকে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৮ প্রদান করবেন প্রধানমন্ত্রী।
সেক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টিলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দি ন্যাশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মোড়ক উন্মোচন করা হবে এবং প্রধানমন্ত্রীর হাতে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত মোহসেন আল-আরিশি রচিত বইয়ের অনুবাদ-শেখ হাসিনা : যে রূপকথা শুধু রূপকথা নয় তুলে দেয়া হবে। উদ্ভোধন অনুষ্ঠান শেষে গ্রন্থমেলা পরিদর্শন করবেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকাল ১১টায় একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে মেলার সার্বিক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী এসব তথ্য জানান। সার্বিক প্রস্তুতি বিষয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করেন গ্রন্থমেলার সদস্য-সচিব ড. জালাল আহমেদ। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির সচিব মোঃ আব্দুল মান্নান ইলিয়াস, জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক অপরেশ কুমার ব্যানার্জী, গ্রন্থমেলার ইভেন্ট ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান নিরাপদ মিডিয়া এন্ড কমিউনিকেশন্স লিমিটেড চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, স্পন্সর প্রতিষ্ঠান বিকাশ লিমিটেডের সিএমও মীর নওবত আলী। গ্রন্থমেলার নতুন লোগো উপস্থাপন করেন স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। অনুষ্ঠানে বিদেশি অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলা ভাষার প্রখ্যাত কবি শঙ্খ ঘোষ (ভারত) এবং প্রখ্যাত লেখক-সাংবাদিক ও গবেষক মোহসেন আল-আরিশি (মিশর)। বাংলা একাডেমি থেকে ১০২টি নতুন বই মেলায় আসছে বলে জানানো হয়।
মেলার পরিসর বাড়ছে: এবার গ্রন্থমেলায় পরিসরের সাথে সাথে প্রকাশনা সংস্থার সংখ্যাও বেড়েছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় ৩ লাখ বর্গফুট জায়গায় মেলার স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশকে ৪টি চত্বরে বিন্যস্ত করা হয়েছে। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০৪টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫০টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৯৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৬২০টি ইউনিটসহ মেলায় মোট ৪৯৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭০টি ইউনিট এবং ২৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ২৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে ১৮০টি লিটলম্যাগকে ১৫৫টি স্টল দেয়া হয়েছে। ২৫টি স্টলে ২টি করে লিটলম্যাগাজিনকে স্থান দেয়া হয়েছে। অন্য ১৩০টি প্রতিষ্ঠান স্টল পেয়েছে। এবার প্রথমবারের মতো গ্রন্থমেলার স্টল বরাদ্দের ক্ষেত্রে অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া চালু হয়।
শিশুকর্ণার : মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে শিশুকিশোর বিনোদন ও শিক্ষামূলক অঙ্গসজ্জায় সজ্জিত শিশুকর্ণার থাকবে। মাসব্যাপী গ্রন্থমেলায় এবারও ‘শিশুপ্রহর’ ঘোষণা করা হবে।
মোড়ক উন্মোচন ও তথ্যকেন্দ্র: প্রতিবারের মত এবার মেলায় নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে । দর্শনাথীদের জন্য তথ্যকেন্দ্র থাকবে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদিতে এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সাংবাদিকদের জন্য গ্রন্থমেলায় মিডিয়া সেন্টার থাকবে তথ্যকেন্দ্রের উত্তর পাশে-পশ্চিম পাশে। গ্রন্থমেলার খবর নিয়ে প্রতিদি বুলেটিন প্রকাশিত হবে এর পাশাপাশি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যাবে।
গ্রন্থমেলায় টিএসসি ও দোয়েল চত্বর উভয় দিক দিয়ে দুটো মূল প্রবেশপথ, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তিনটি পথ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বাহিরের মোট ৬টি পথ থাকবে। বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশের বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের নিরাপত্তাকর্মীরা সতর্ক অবস্থানে থাকবেন। গ্রন্থমেলার প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হবে। নিচ্ছন্দ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মেলার সমস্ত এলাকাজুড়ে ৩ শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পুরষ্কার পাচ্ছেন কয়েকটি প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান: গত বছরের গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেয়া হবে। এছাড়া শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য ১টি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ-বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হবে।
মেলায় নতুন সংযোজন: নতুন সংযোজন হিসেবে এবার মেলায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে আবেদনপত্র বিতরণ-গ্রহণ এবং অনলাইনে ভাড়ার অর্থ পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়েছে। থিম নির্ধারণ করাও মেলার নতুন সংযোজন বলছেন কর্তৃপক্ষ । এছাড়াও এবার নতুন করে মেলায় দেখা মিলবে, স্বাধীনতাস্তম্ভ ও স্তম্ভের সামনের জলাধার গ্রন্থমেলার অংশ হওয়া , প্রবেশপথে বৃহৎ এলইডি মনিটর, ‘লেখক বলছি’ মঞ্চ, শিশু-কিশোরদের লেখালেখিতে উৎসাহিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা, সম্প্রসারিত নামাজের ঘর ও টয়লেট ব্যবস্থা ও মহিলাদের জন্য সম্প্রসারিত নামাজ ঘর। এছাড়াও শিশু চত্বর ও পুলিশ নিয়ন্ত্রণ কক্ষের পাশে দুটি ব্রেস্টফিডিং কর্নার থাকবে।
সময়সূচি : গ্রন্থমেলা ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বিকেল ৩ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১ টা থেকে রাত ৯ টা এবং ২১ ফেব্রæয়ারি সকাল ৮ টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলবে।##
Leave a Reply