বাহুবল প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জ জেলার বাহুবলে স্ত্রী’র অধিকার আদায়েরে দাবিতে রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রেমিক সাগর রায় (৩০) এর কর্মস্থল গেইটে অনশনে বসেছেন এক প্রেমিকা (২৪)।
সোমবার সকাল ১১টা থেকে থেকে বিকাল ৫ পর্যন্ত উপজেলার পুটিজুরী দি প্যালেস লাক্সারী রিসোর্ট গেইটে এ ঘটনাটি ঘটে।
জানা যায়, ২০১৩ সালে বগুড়া জেলার রাজেস্বর রায়ের পুত্র সাগর রায় দিনাজপুর রূপালী জুটমিলে চাকুরী করার সুবাদে পরিচয় হয় সেখানের বিরল উপজেলার আদর্শ পাড়া গ্রামের আইয়ুব আলীর কন্যা ৭ম শ্রেনীর ছাত্রী সুইটি আক্তারের সাথে। পরিচয় থেকে তাদের মধ্যে সম্পর্কের সৃষ্টি হলে তারা দোজন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চাইলে এক পর্যায়ে সাগর রায় হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। তখন সাগর রায় থেকে তার নাম রাখা হয় সাগর সিদ্দিকী।
এরপর সুইটিকে প্রথমে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে এভিডেভিট করে কিছুদিন পর একজন স্থানীয় আলেমের মাধ্যমে ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তখন সুইটি প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়ায় তাদের বিবাহে কোনো কাজীর মাধ্যমে করা সম্ভব হয়নাই। বিয়ের বছর দেড়েক পরে সাগর রায় পূণঃরায় তার স্বধর্মে ( সনাতনে) ফিরে যায়, এবং সুইটি আক্তারকে বলে দেয় – যদি সে হিন্দুধর্ম গ্রহণ করে তাহলে তাদের দাম্পত্য জীবন চলবে, নতুবা সম্ভব নয়।নিজের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সুইটি হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করে ফেলে। তখন সুইটি আক্তার থেকে তার নাম দেয়া হয় সুইটি রানী রায়। এভাবে ৪/৫ বছর দিনাজপুর একটি ভাড়া বাসায় চলে তাদের দাম্পত্য জীবন।
এই দাম্পত্য জীবনে দুইবার অন্তসত্ত্বা হয়েছে বলে সুইটি জানায়, কিন্তু প্রতিবারই তার গর্ভের সন্তান নষ্ট করে দেয় চতুর সাগর রায়। এদিকে গত দুই বছর পূর্বে সাগর রায় ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিয়োগ পায় বাহুবল উপজেলার পুটিজুরীতে অবস্থিত দি প্যালেস লাক্সারী রিসোর্টে। চাকুরী করার জন্য সুইটিকে দিনাজপুরের একটি ভাড়া বাসায় রেখে সাগর চলে আসে পুটিজুরী। দুই বছর যাবৎ বাসা ভাড়া সহ সুইটির যারতীয় খরচ বহন করে সাগর রায়। কিন্ত সাগর কিছুতেই দিনাজপুর আর যাওয়া আসা না করার কারনে সুইটির সন্দেহ হয়।
খবর নিয়ে জানতে পারে সাগরের জন্য তার পরিবার পাত্রী দেখতেছে। এ খবর পাওয়ার পরই সুইটি আক্তার চলে অাসে পুটিজুরী সাগরের কর্মস্থল দি প্যালেসে। প্যালেস গেইটে সকাল ১১ টা থেকে অনশন শুরু করে। খবর পেয়ে পুটিজুরী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই মোবাশ্বির আহমেদ ও প্যালেসের সিকিউরিটি সুপার ভাইজার শাহ মাজিদুর রহমান শিপু বিকাল ৫ টার দিকে তাকে উদ্ধার করে পুটিজুরী ইউপি অফিসে নিয়ে আসেন।
তখন পুটিজুরী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও তাতী লীগের জেলা সভাপতি আলহাজ্ব মোদ্দত আলী, ইউপি সদস্যগণ ও এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের উপস্থিতে সাগর রায়কে অফিসে ডেকে আনা হয়। প্রথমে সাগর রায় তাদের বিয়ের বিষয়টা অস্বীকার করে শুধু সম্পর্কের কথা স্বীকার করে। কিন্ত সকলের উপস্থিতিতে সুইটির ফোনে রেকডিং করে রাখা তাদের দোজনের ফোনালাপ শুনালে সাগর নীবর হয়ে যায়। পরে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মিমাংসার অনেক চেষ্টা করলেও পরে তাদের সকল চেষ্টা ব্যার্থ হয়ে যায়। কারন সুইটি শুধু সাগরকে চায়, আর কিছুতেই সে সন্তোষ্ট নয়। এমনকি প্রয়োজনে আত্মহত্যারও হুমকি প্রদান করে।
শেষ পর্যন্ত উপস্থিত মুরুব্বিগণ বাহুবল উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্নিগ্ধা তালুকদারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন মঙ্গলবার দুপুর ১২ টার দিকে সুইটিকে উপজেলা কার্যালয়ে নিয়ে আসার জন্য। তখন উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তা ও স্থানীয় মুরুব্বিগণ সুইটিকে সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার জোৎস্না বেগমের জিম্মায় দুইজন মহিলা গ্রাম পুলিশ সহ দেয়া হয়।
পরে মঙ্গলবার দুপুর ১২ টার দিকে তাকে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে হাজির করা হয়। এ বিষয়ে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্নিগ্ধা তালুকদার জানান, আমি বিষয়টি ছেলে মেয়ে উভয় জনের সাথে কথা বলে স্থানীয়ভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে মেয়েটিকে তার এলাকায় গিয়ে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি, এবং আমার পক্ষ থেকে যতটুকু আইনি সহযোগীতা করার ধরকার আমি তা করার আশ্বাস দিয়ে মেয়েটিকে দিনাজপুর পাঠিয়ে দিয়েছি। এদিকে একটি মুসলমান মেয়ের সিথিতে সিদুর পরিয়ে প্রতারনা করে এখন স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ না করায় সাগর রায়ের কর্মস্থল পুটিজুরী এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
Leave a Reply