নুর উদ্দিন সুমন ॥ হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সীমান্ত এলাকায় খোয়াই নদী দিয়ে চোরাই পথে ভারত থেকে নিয়ে আসা প্রায় অর্ধকোটি টাকার ভারতীয় চা পাতা ও টায়ার আট করছে স্থানীয় জনতা। এসময় জনতার ধাওয়া খেয়ে চোরাকারবারিরা পালিয়ে গেলে বেশ কিছু চা-পাতা ও টায়ার জনসাধারণ কুড়িয়ে নিয়ে যায়। শুক্রবার সকাল ৭টায় এঘটনাটি ঘটে। জানা যায়, চুনারুঘাট উপজেলার বনগাঁও কোটবাড়ী গোদারাঘাট এলাকা দিয়ে ভারতীয় চা পাতা এবং গাড়ির টায়ার প্রবেশ করার সময় স্থানীয় জনতা দেখে হৈচৈ শুরু করে। পরে বিজিবি বাল্লা বিওপির সুবেদার হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে জওয়ানরা খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে ৫হাজার ২৩০ কেজি চা-পাতা ও ৪৯টি টায়ার জব্দ করেন। এবিষয়ে আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল লতিফ জানান, শুক্রবার ভোরে এই বিপুল পরিমাণ চোরাইমাল নদীতে ভাসিয়ে আনার দৃশ্য দেখে বিজিবিসহ স্থানীয় প্রশাসনকে অবগত করেন। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন রহস্যজনিত কারনে তাৎক্ষনিক কোন ভূমিকা না রাখায় তিনি নিজেই স্থানীয় লোকজনকে খবর দিয়ে মালামালগুলো আটক করেন। তিনি আরও জানান এসময় চারপাশ থেকে ছুটে আসা স্থানীয় জনতা বেশকিছু মাল কুড়িয়ে নিয়ে যায়, এবং প্রায় দুইগাড়ি মালামাল বিজিবি আসার পুর্বেই পাচারকারীরা জোরপূর্বক নিয়ে গেছে । যার পরিমান ২৫ লক্ষ টাকা হবে। এঘটনার প্রায় ২/৩ঘন্টা পর বালল্লা বিজিবির একদল জোয়ানরা গিয়ে লুটে নেয়ার অর্ধেক মালামাল জব্দ করেন। তবে এঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি বিজিবি।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, দেশি চায়ের তুলনায় দাম কম হওয়ায় হাটবাজার ও গ্রামগঞ্জের চায়ের দোকানদারেরা এই চায়ের পাতা ব্যবহার করছেন। চায়ের দোকানদার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চোরাইপথে আসা ভারতীয় চা-পাতার দাম অনেক কম। এই চা-পাতা নিম্নমানের। এতে কৃত্রিম রং ও ভেজাল রয়েছে। রং মেশানো থাকায় অল্প পরিমাণে চা-পাতা ব্যবহার করলেই চায়ের রং হয় বেশ সুন্দর ও লোভনীয়। তাই চায়ের দোকানদার ও রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা দেদার এই চা-পাতা ব্যবহার করছেন।এই চা পান করলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটে চোরাইপথে আসা ভারতীয় এই চা পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন। চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও মোমিন উদ্দিন বলেন, রং মেশানো চা পান করলে জন্ডিস, চর্ম, কিডনি, ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগ হতে পারে। উপজেলার কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, উপজেলার সীমান্তের গুইবিল, বাল্লা সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিনই ভারত থেকে আসছে কয়েক হাজার কেজি চা-পাতার প্যাকেট। দেশের নামীদামি কোম্পানির চা-পাতার তুলনায় ভারতীয় এই চায়ের দাম অর্ধেকের কম। মুদি দোকানদার কাইয়ুম বলেন, গত শীত মৌসুমের শুরুতে চুনারুঘাট উপজেলায় যে পরিমাণে চা বিক্রি হয়, সে তুলনায় এ বছর বিক্রির পরিমাণ অর্ধেকের কম। ভারত থেকে আসা রং মেশানো ভেজাল ও নিম্নমানের চায়ের কারণে দেশি কোম্পানির চা বিক্রি হচ্ছে না। কয়েকজন হোটেল-মালিক জানান, ভারত থেকে চোরাইপথে আসা এসব চা-পাতায় রং মেশানো থাকে। দেশি চায়ের তুলনায় এর দাম কম। অপরদিকে রং মেশানো থাকায় অল্প চা-পাতা ব্যবহার করেই অনেক বেশি পরিমাণে চা তৈরি করা যায়। এই চায়ের রং হয় বেশ সুন্দর ও লোভনীয়। তবে বেশি দেরি হলে রং কালো হয়ে যায়। বিজিবির কয়েকজন সদস্য বলেন, স্থানীয় মানুষ সহযোগিতা না করলে এবং সচেতন না হলে এটা পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়। এদিকে স্থানীয় বেশ কিছু লোকজন জনানান, বিজিবি ক্যাম্পের কাছে বারবার এমন ঘটনা ঘটছে বিজিবির ভুমিকা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
Leave a Reply