নুর উদ্দিন সুমন : জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্টহারে সরকারি উপবৃত্তি প্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করে কলেজে পাঠিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। শিক্ষা অধিদপ্তর সেবা কার্যক্রমের আওতায় শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অভিভাবকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। টাকা মোবাইলে পৌঁছার পর থেকেই শিক্ষা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও প্রফেসর পরিচয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ফোন করছে প্রতারক চক্র। প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে বিকাশে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা দেশে নতুন কিছু নয়। তবে এ ধরনের প্রতারণা চুনারুঘাটে ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এমনকি প্রতারক চক্রের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। তবে আধুনিক এ ব্যাংকিং সুবিধা সম্পর্কে অভিভাবকদের সুস্পষ্ট ধারণা না থাকার সুযোগে, প্রতারকচক্র অভিভাবকদের ধোঁকায় ফেলে কখনও বিকাশের এজেন্ট, কখনও শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা, কলেজ শিক্ষক ও প্রফেসর পরিচয় দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে গোপন পিন নম্বর। এর পর তা পরিবর্তন করে সহজেই বিকাশে জমাকৃত ও উপবৃত্তির টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে জানান প্রতারণার শিকার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। প্রতারক চক্র বিভিন্ন কৌশলে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রতারণার শিকার পৌরশহরের চুনারুঘাট সরকারি কলেজের রেজুওয়ানা ইসলাম উপমা নামের এক শিক্ষার্থী প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে (৪ জুন) রাতে চুনারুঘাট থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, গত (৩ জুন বৃহস্পতিবার) বিকেল সাড়ে ৩ টায় এক প্রতারক তার দাদুর কাছে এত (০১৬০১৭২৭২০১) নাম্বার থেকে ফোন আসে । উপমার উপবৃত্তির বিকাশ নাম্বার তার দাদুর নাম্বারে। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রফেসর সামাদ নামে একজন ফোন করেন। ফোনের মাধ্যমে উপবৃত্তি প্রাপ্ত রেজুয়ানা ইসলাম উপমার খোঁজ নেয়া হয়। ওই প্রফেসর নামীয় ব্যক্তি তার দাদুর বিকাশ নাম্বারে ফোন দিয়ে বলে উপমাকে ১৬ হাজার টাকা দেয়া হবে । পরে ধোঁকায় ফেলে গোপন পিন নম্বর সংগ্রহ করে প্রতারনার মাধ্যমে তার দাদুর বিকাশ একাউন্ট থেকে ২৪শ টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। উপমা ছাড়াও শিক্ষার্থী প্রিনা নামের আরেক শিক্ষার্থীর অভিভাবকের মোবাইল থেকে হাতিয়ে নেয় ৫০ হাজার। প্রতারকদের হাত থেকে রেহাই পায়নি এক ইউনিয়ন সচিবও হাতিয়ে নেয় ৫৬ হাজার টাকা। একইভাবে আরেক শিক্ষার্থী সাবরিনা নামের তার মায়ের নাম্বার থেকে ২৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে প্রতারক চক্ররা। এমন অর্ধশতাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে কৌশলে টাকা তুলে নিয়েছে এ প্রতারকচক্র। এবিষয়ে চুনারুঘাটন পৌরএলাকার বিকাশ এজেন্ট ওয়াহিদ টেলিকমের সত্তাধীকারী সাহাব উদ্দিন বলেন, সংগত কারণেই অচেনা কাউকে পিনকোড বা পাসওয়ার্ড না দিতে অভিভাবকদের মধ্যে পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালানো দরকার। পাশাপাশি যেসব ফোন নম্বর থেকে অভিভাবকদের ফোন দিয়েছিল প্রতারকরা, তা সংগ্রহ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় তদন্ত করে অপরাধীদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করলে এমন প্রতারণা কমে আসবে। ভুক্তভোগী অভিভাবকরা বলছেন, তাদের ফোনে টাকা আসলে শিক্ষকরা তাদের জানিয়ে দেন। তারা স্থানীয় এজেন্টদের মাধ্যমে টাকা তুলে থাকেন। গোপন পিন নম্বর সম্পর্কে তাদের তেমন ধারণা নাই।প্রতারকরা তাদের ফোন করে এজেন্টের পরিচয় দিয়ে একটি পিন নম্বর পাঠায়। ফোনে তারা এটি জানতে চায়। ফোন কেটে দেয়ার পর একটা মেসেজ আসে। টাকা তুলতে গিয়ে দোকানদার বলে- ‘একাউন্টে একটি টাকাও নেই। জিরো ব্যালান্স! এ বিষয়ে শিক্ষকরা বলছেন, ‘এ প্রতারণার বিষয়টি তারা অভিভাবকদের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। গ্রামাঞ্চলের অভিভাবকরা তেমন সচেতন না। তাদের ফোন করে গোপন পিন নম্বর জানতে চেয়েছে- তারা সেটা বলে দিয়েছে। আর এভাবেই প্রতারক চক্র তাদের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে’। এদিকে বিকাশ প্রাপ্তদের ব্যক্তিগত অনেক তথ্য প্রতারকরা জেনে গেছে। অনেক সময় পারিবারিক তথ্য পরিচয় এডভান্স বলে অভিভাবকদের অবাক করে দিচ্ছে প্রতারকরা ফলে অভিভাবকগণ খুবই প্রতারকদের বিশ্বাস করে তথ্য প্রকাশ করে দিচ্ছেন । অভিভাবকরা বলছেন শিক্ষার্থীদের পারিবারিক তথ্য একমাত্র কলেজ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট বিকাশ এজেন্ট জানে এছাড়া কেউ জনার কথা নয়। তাহলে কিভাবে প্রতারকরা এমন সব তথ্য জানে? এনিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দাবী জানিয়েছেন অভিভাবকরা। এবিষয়ে চুনারুঘাট থানার ওসি মো: আলী আশরাফ বলেন, প্রতারকদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া উপবৃত্তির বিষয়ে টাকা চাওয়া বা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর্থিক প্রলোভনে প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে টাকা লেনদেন না করতে সর্তক থাকতে বলেন তিনি।
Leave a Reply