সফল হতে পরিকল্পনামাফিক আমরা অনেক কাজই করে থাকি।
সাফল্যের পেছনে ছুটোছুটি করি।
সফল হতে গেলে মাত্র চারটি বিষয়ে মনোযোগী হতে হয়। এই চারটি বিষয় আয়ত্ত করতে পারলে যেকোনো মানুষই সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে উঠতে পারে – ইহকালে এবং পরকালেও। সূরা ‘আসরের দ্বিতীয় আর তৃতীয় আয়াতে আল্লাহ তাআলা এই চারটি বিষয় আমাদের বলে দিয়েছেন। তাহলে জেনে নেওয়া যাক সেই চারটি বিষয়:
১. বিশ্বাস রাখুন: “ঈমান” শব্দের অর্থ হলো বিশ্বাস। মৃত্যু পরবর্তী জীবনে সফলতা চাইলে এক আল্লাহ তাআলা, তাঁর রাসূল (সা.) এবং রাসূল (সা.) এর উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে বিশ্বাস রাখতে হবে। আর এই জীবনে সাফল্য অর্জন করতে হলে আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে – “আমি পারবই ইনশা’ আল্লাহ”। হাল ছেড়ে দিলে চলবে না।
(সূরা ‘আসর ১-২) সময়ের শপথ, নিশ্চয়ই মানুষ চরম ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত। তারা ছাড়া, যারা ঈমান এনেছে…
২. যা করা দরকার তা করে যান: অনেক সময় আমাদের এমন হয় যে – নামায পড়তে ইচ্ছা করে না, যিকর করতে মন চায় না, কোরআন মজিদ পড়ারও আগ্রহ পাওয়া যায় না – তবু যেহেতু আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল (সা.) এই আমলগুলো আমাদের করতে বলেছেন – তাই এগুলো করে যেতে হবে।
একইভাবে, দুনিয়াতে সাফল্য লাভের জন্যও কিছু রুটিন ওয়ার্ক আছে, সেগুলি আমাদের করে যেতে হবে। যেদিন ভালো লাগবে সেদিনও একজন ছাত্রকে পড়তে বসতে হবে, যেদিন ভালো লাগবে না সেদিনও তাকে পড়তে বসতে হবে; একজন চাকুরিজীবীর যেদিন কাজে মন বসবে সেদিন অফিসের কাজ করতে হবে।
আবার কাজে মনোযোগ না বসলেও জোর করে অফিসের কাজ করে যেতে হবে। যা করা উচিত তা করতে থাকতে হবে, আজ বা আগামীকাল এর ফল চোখে না দেখা গেলেও, পরশু এর ফল ঠিকই পাওয়া যাবে
(সূরা ‘আসর ৩)
যারা ভালো কাজ করে।
৩. নতুন কিছু শিখুন: আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদের সূরা ফাতির-এর ২৮ নং আয়াতে বলেছেন- إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاء إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ غَفُورٌ “আল্লাহ তাআলার বান্দাদের মধ্যে শুধু তারাই তাঁকে ভয় করে যাদের জ্ঞান আছে”। ইসলাম সম্পর্কে আপনি যত জানবেন ততই প্রাত্যহিক ইবাদতগুলো আপনার কাছে ধীরে ধীরে গভীর অর্থবহ হয়ে উঠবে। নামায-রোযাকে আপনার কাছে কেবল রুটিন ওয়ার্ক কোনো ব্যাপার বলে মনে হবে না, বরং তখন আপনি এই ইবাদতগুলোর মাঝে ঈমানের সুমিষ্ট স্বাদ আস্বাদন করতে থাকবেন।
পার্থিব জীবনেও সেই ব্যক্তি তত সফল, যে অন্য মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশী অবদান রাখতে পারে। আর অন্যের উপকারে আসতে চাইলে, আগে নিজের উন্নয়ন করতে হবে। ভালো কথা অন্যকে বলতে হলে আগে নিজেকে ভালো কথা শিখতে হবে।
وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ
(সূরা ‘আসর ৩)
একে অপরকে সঠিক উপদেশ দেয়।
৪. মানুষের উপকারে আসো: নবী হওয়ারও আগে হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন মক্কার সবচেয়ে বিশ্বস্ত আর পরোপকারী মানুষ। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর সমস্ত জীবন ব্যয় করেছেন অন্য মানুষদের ভাগ্য উন্নয়নে। যত অল্প টাকাই হোক না কেন আমরাও তা দিয়েই মানুষকে সাহায্য করব, যত অল্প শ্রমই হোক না কেন তা দিয়ে মানুষের উপকার করব।
★★★ যত অল্পই শিখি না কেন, তা অন্যদের সাথে শেয়ার করব। পরিবার, বন্ধু, প্রতিবেশীসহ সব মানুষকে উপকারের চেষ্টা করব। কারো কাছ থেকে প্রতিদান চাইবো না, প্রতিদান চাইবো শুধুই আল্লাহর কাছে।
প্রথমত- মানুষকে উপকার করার এই পথ মধুর না, বন্ধুর। অনেক সমালোচনা-গালমন্দ শুনব, অনেক অকৃতজ্ঞ মানুষের দেখা পাবো, অনেক সময় আর্থিক বা সামাজিক সংকটে পর্যন্ত পড়ে যেতে পারি – তবু ধৈর্য্য ধরব। যত অল্পই হোক না কেন, নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী বিলিয়ে দেবো। হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, খেজুরের অর্ধেকটা দান করে হলেও নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও (বুখারী)।
وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ
(সূরা আসর-৩)
একে অপরকে ধৈর্য্যের উপদেশ দেয়।
দ্বিতীয়ত -তৃতীয় আয়াতে বর্ণিত এই চারটি কাজ যদি আমরা না করি তাহলে আমরা মারাত্মক ক্ষতির মধ্যে ডুবে যাবো। এই ক্ষতির ভয়াবহতা যে কতটা চরম তা বুঝাতে আল্লাহ তাআলা এই কাজগুলোর উপর চারভাবে গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
তৃতীয়ত- আল্লাহ তাআলা “ইন্নাল ইনসানা ফী খুসর” (নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতির মধ্যে আছে), না বলে “ফী” এর আগে “লা” যুক্ত করেছেন। এই “লা” এর অর্থ হলো “অবশ্যই”। সুতরাং আল্লাহ তাআলা যখন বললেন “ইন্নাল ইনসানা লাফী খুসর”, এর অর্থ দাঁড়ায় “নিশ্চয়ই অবশ্যই মানুষ ক্ষতির মধ্যে আছে”।
চতুর্থত- আল্লাহ তাআলা তৃতীয় বাক্য শুরু করলেন “ইল্লা” (“শুধু তারা বাদে” বা Except) দিয়ে। ইল্লা দিয়ে কোন বাক্য শুরু করা হলে সেটা পূর্ববর্তী বাক্যের গুরুত্ব বাড়িয়ে দেয়। যেমন – কোন ক্লাসের ১০০ জন ছাত্রের মধ্যে যদি ৯৫ জন ফেইল করে তাহলে টিচার বলবেন –
“এই ক্লাসের ছাত্ররা ফেল করেছে, শুধু কয়েকজন বাদে”, অর্থাৎ ফেল করাটাই যেন স্বাভাবিক ঘটনা, পাশ করাটা হলো ব্যতিক্রম। একইভাবে, আল্লাহও তাআলা বলতে চাইছেন যে, অধিকাংশ মানুষই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে, শুধু গুটিকয় আছে যারা সঠিক পথে আছে।
আমাদের অফিসের কোন বিশ্বস্ত কলিগ যদি এক বা দুইবার নয়, চার চারবার ফোন করে বলে – “বন্ধু, মহাখালীর রাস্তায় এক্সিডেন্ট হয়েছে, বিরাট জ্যাম, ভুলেও ঐ পথে যেও না, ঘুরে যাও” – তাহলে আমরা বাসায় ফিরতে নিশ্চিত মহাখালীর রাস্তা নিব না।
আর, আমাদের পালনকর্তা প্রভু যখন আমাদের একই আয়াতে চারবার সতর্ক করে কোন কিছু করতে আদেশ করেন তখন আমরা কত অনায়াসে সেই আদেশ অমান্য করে দিনাতিপাত করতে থাকি! ইমাম শাফেঈ’ রহ. বলেছেন – লোকে যদি শুধু এই সূরা (সূরা ‘আসর) নিয়ে চিন্তা করত, সেটাই তাদের জন্য যথেষ্ট হত।
Leave a Reply